নিকাশি সমস্যা নিয়ে জেরবার হলদিয়ার প্রবেশদ্বার ব্রজলালচক

হলদিয়া শহরের প্রবেশদ্বার ব্রজলালচক। এলাকার রয়েছে জমজমাট বাজার। সেখানে রয়েছে, একাধিক দোকান, রুটি বেকারি, মিষ্টির দোকান। এছাড়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বড় শাখার পাশাপাশি রয়েছে দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার। বাজারে রয়েছে চারটি বাজার কমিটিও। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার প্রধান সমস্যা নিকাশি ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতে দোকানে জল ঢুকে যায়, বর্ষাকালে তো কোনও কথাই নেই।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

অবৈধ নির্মাণ ও কচুরিপানায় ঢাকা পড়েছে নালা। নিজস্ব চিত্র।

হলদিয়া শহরের প্রবেশদ্বার ব্রজলালচক। এলাকার রয়েছে জমজমাট বাজার। সেখানে রয়েছে, একাধিক দোকান, রুটি বেকারি, মিষ্টির দোকান। এছাড়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বড় শাখার পাশাপাশি রয়েছে দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার। বাজারে রয়েছে চারটি বাজার কমিটিও। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার প্রধান সমস্যা নিকাশি ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতে দোকানে জল ঢুকে যায়, বর্ষাকালে তো কোনও কথাই নেই। সেই সময় বাজার করতে এই রাস্তা দিয়েই হাঁটুজল পার করতে হয়। এমনকী সেই সময় কখনও কখনও এটিএম পরিষেবাও বন্ধ করে দিতে হয়।

Advertisement

ব্রজলালচকের স্থানীয় দোকানদাররা জানান, বাজারে নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার সময় কিংবা একটু বৃষ্টিতেই ভেসে যায় এলাকা। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় শ’চারেক দোকান এবং দেড়শোর বেশি পরিবার এই সমস্যায় জেরবার। বাজারে যে একাধিক দোকান রয়েছে তাদের নিজস্ব কোনও নিকাশি নালা না থাকায় এই সমস্যা। আবার শুধু বর্ষায় নয়, সমস্যা থাকে অন্য সময়ও। নালা না থাকায় জমা জল সহজে বের হতে পারে না। দূষণ, দুর্গন্ধে কার্যত নরকের পরিস্থিতি। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, “বর্ষায় ব্যাঙ্কের মধ্যে জল ঢুকে যায়। কাজে অসুবিধা হয়। সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা।” একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্ষায় এটিএমের মধ্যে এক হাঁটু জল জমে যায়। বৈদ্যুতিক লাইনে গণ্ডগোলের আশঙ্কায় লিংক ছিন্ন করে বন্ধ করে দিতে হয় পরিষেবা। ব্রজলাল চক বাপুজি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালুমোহন কপাটের অভিযোগ, “প্রশাসনিক স্তরে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। জল নিকাশি নেই তাই হামেশাই ঝামেলা বাধে।”

কিন্তু কেন এই সমস্যা?

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পর নিকাশি ব্যবস্থা পাকা হওয়ার আগেই বেদখল হয়ে যায় জায়গা। সেখানেই গড়ে ওঠে বহু অস্থায়ী দোকান, কাঁচা বাড়িও। এইসবের বেশিরভাগই গড়ে ওঠে নিকাশি নর্দমা বুজিয়ে। জাতীয় সড়কের কাজ শেষ হওয়ার পর পুনরায় ওই দোকানগুলি বসতে শুরু করে। সেই সময় স্থানীয় স্তরে নজরদারির অভাবেই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে। নালার উপর দোকান করে বসে থাকা এক দোকানদারের কথায়, “আগে রাস্তার ধারে দোকান দিয়েছিলাম। রাস্তা চওড়া হওয়ার সময় আমাদের সরানো হয় । কাজ শেষের পর আমরা ফের দোকান দিই। সেই সময় নেতারা টাকা নিয়ে আমাদের বসিয়েছিলেন।” ব্রজলাল চকে দীর্ঘদিন বাজার করেন সচিন সেন এবং শ্যামল সামন্ত। তাঁরা জানান, রাস্তার উপর বাজার বসে। নিকাশি না থাকায় এলাকায় মাছি মশার উপদ্রব বেশি। এলাকার প্রবীন বাসিন্দা রামতনু দাস বলেন, “এত জমজমাট বাজার এলাকায় কোন নিকাশি নেই ভাবাই যায় না।”

ব্রজলালচক গান্ধী মার্কেট বাজার কমিটির সভাপতি আলোক দাসের অভিযোগ, “নিকাশিহীন এই বাজার চত্বর পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। মহিলাদের জন্য শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ সময়ে জল থাকেনা।” হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি চন্দন সামন্ত বলেন, “ওই বিরাট এলাকায় কোন নিকাশি নেই আমরা জানি। আসলে ওই জায়গা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। বেশ কয়েকটি দোকান প্রস্তাবিত নিকাশি নালার উপর কাঠামো তৈরি করে ব্যবসা করছে। আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী সমিতিতে আলোচনা করেছি। অবশ্যই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ব্রজলাল চক এলাকায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। হলদিয়া গেট বসার পাশাপাশি হয়েছে পথবাতির ব্যবস্থাও। কিন্তু সমস্যা মূলত নিকাশি নিয়েই। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী সমস্যার বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তাঁর কথায়, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। যেহেতু ওই জায়গাটি জাতীয় সড়ক কতৃর্পক্ষেকর, তাই তাদের অনুমতি ছাড়া এইচডিএ কাজ করতে পারছে না। তবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমস্যা নিরসনে আলোচনা করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন