নিজের বাড়িতেই রকিকে রাখেন অশোক

শহরের ইমারতি সরঞ্জামের ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকিকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় নতুন সূত্র পেল পুলিশ। অপহরণের পরে ওড়িশায় নয়, খোদ ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতেই রকিকে আটকে রেখেছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন প্রধান অভিযুক্ত পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে এই কথা কবুল করেছেন অশোক ও তাঁর পরিচারক টোটন রাণা এবং অশোকের ভাইপো সুমিত শর্মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০০:৫০
Share:

এই বাড়িতেই রাখা রয়েছিল রকিকে।

শহরের ইমারতি সরঞ্জামের ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকিকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় নতুন সূত্র পেল পুলিশ। অপহরণের পরে ওড়িশায় নয়, খোদ ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতেই রকিকে আটকে রেখেছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন প্রধান অভিযুক্ত পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরার মুখে ভেঙে পড়ে এই কথা কবুল করেছেন অশোক ও তাঁর পরিচারক টোটন রাণা এবং অশোকের ভাইপো সুমিত শর্মা।

Advertisement

দশ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে অশোক-সহ তিন অভিযুক্তকে সোমবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। সরকারি কৌঁসুলি কণিষ্ক বসু বিচারককে জানান, অভিযুক্তদের জেরা করে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তাদের এ বার জেল হেফাজতে রাখা হোক। এ দিনও অভিযুক্তদের তরফে কোনও আইনজীবী দাঁড়ান নি। বিচারক কৃষ্ণমুরারিপ্রসাদ গুপ্ত অশোক-সহ তিন অভিযুক্তকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ২ জুন তিন অভিযুক্তকে ফের আদালতে তোলা হবে। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “অপহরণের পরে রকিকে নিজের বাড়িতেই আটকে রাখার কথা স্বীকার করেছেন মূল অভিযুক্ত। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখে চার্জশিট দাখিল করা হবে।” এ দিনও অভিযুক্তদের দেখার জন্য আদালতে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ।

পুলিশের দাবি, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন বার বার নানা রকম কথা বলে তদন্তকারী অফিসারকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন অশোক শর্মা। প্রথমে রকিকে অপহরণ করে ওড়িশায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন অশোক। পরে তিনি বলেছিলেন খড়্গপুরের এক মাফিয়া ডনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি রকিকে অপহরণ করেছেন। পুলিশের দাবি, সবশেষে অবশ্য অশোক স্বীকার করে নেন, গত ২৫ এপ্রিল রকিকে অপহরণ করে নিজের বাড়িতেই আটকে রেখেছিলেন। রকি অশোকের কাছে কিছু টাকা পেতেন। ওই টাকা দেওয়ার নাম করে এবং ওড়িশায় মাল সরবরাহের টোপ দিয়ে রকিকে রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। পুলিশের আরও দাবি, ঝাড়গ্রাম শহরে স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে নিজের বাড়ির একতলার অফিস লাগোয়া একটি ঘরে রকিকে বেঁধে রেখেছিলেন অশোক। অশোকের বাড়িটি দুর্গের মতো। বাইরে থেকে কিছুই সেভাবে দেখা যায় না। পুলিশের দাবি, জেরায় অশোকের পরিচারক টোটন রাণা জানিয়েছেন, তিনি রকির দেখাশোনাভাল করতেন। হাতের বাঁধন খুলে খাবার দিতেন। কড়া পাহারায় বাথরুমে নিয়ে যেতেন। রকির মোটরবাইকটির নম্বর প্লেট খুলে সাপধরার রাস্তায় রেখে আসার কথা কবুল করেছেন টোটন। পুলিশের দাবি, জনবহুল এলাকায় নিজের বাড়িতে রকিকে আটক করে রাখার পিছনে অশোকের অপরাধমনস্কতাই কাজ করেছে।

Advertisement

আদালতে অশোক শর্মা।

এই সময় বাড়িতে অশোকের স্ত্রী পুনম শর্মাও ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পুনমদেবী নার্ভের জটিল অসুখে আক্রান্ত। কার্যত শয্যাশায়ী তিনি। অশোক গ্রেফতার হওয়ার পর পুনমদেবী ঘাটশিলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। রকির অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে পুনমদেবীর ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মুক্তিপণ পাওয়া অসম্ভব বুঝেই রকিকে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে ওড়িশায় খুনের উদ্দেশে নিয়ে যান অশোক। ৫ মে ওড়িশায় যাওয়ার পথে পাঁচটি টোল প্লাজায় অশোকের গাড়িটি টোল দিয়েছিল বলে নথি পেয়েছে পুলিশ। অশোক নিজেই গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। অশোক শর্মার ভাইপো সুমিত শর্মাকে জেরা করে রকির মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত ২৫ এপ্রিল ব্যবসার কাজে মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বছর পঁচিশের সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকি। ঝাড়গ্রামের বলরামডিহির বাসিন্দা সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবালের ইমারতি সরঞ্জামের ব্যবসা রয়েছে। বাণিজ্যের স্নাতক সৌরভ ওই ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে ঝাড়গ্রামের সাপধরা এলাকায় নম্বর প্লেট খোলা অবস্থায় রকির বাইকটি পাওয়া যায়। ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সৌরভের বাবা। সৌরভকে খুঁজে বের করার জন্য ঝাড়গ্রামের এসপি অলোক রাজোরিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে অপহরণকারীরা সৌরভদের মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ তিন কোটি দাবি করে। অবশেষে পুলিশ জানতে পারে সৌরভ-অপহরণের মূল পাণ্ডা হলেন অশোক শর্মা। ৮ মে অশোক-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তার আগেই অবশ্য রকিকে খুন করা হয়েছিল। গত ৬ মে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার রম্ভা থানার পুলিশ রকির দেহ উদ্ধার করে।

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন