বিপর্যয়টা এড়ানো গেল না!
লক্ষ্মণহীন ভোটেও কমানো গেল না পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বামেদের রক্তক্ষরণ।
সিপিএম থেকে লক্ষ্মণ শেঠকে বহিষ্কারের পর তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের জেলার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পরিচালনায় দায়িত্ব দিয়েও ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হল না। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সিপিএমের শেখ ইব্রাহিম আলিকে ২,৪৬,৪৮১ ভোটে হারিয়ে জয়ী হলেন। নন্দীগ্রামে ২০০৯ সালে যেখানে তৃণমূল প্রায় ৫৫,০০০ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। সেখানে এবারে সেই ব্যবধান হয় ৮৩,৯৯৭। হতাশ করেছে হলদিয়াও। ২০১২ সালের পুর নির্বাচনে হলদিয়ার ২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতে জয়লাভ করে তৃণমূল। ২০১৩ সালে বাম কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে তৃণমূল হলদিয়া পুরসভার দখল নেয়। বামেরা সেই সময় অভিযোগ করে, অন্যায়ভাবে তৃণমূল হলদিয়া পুরসভা দখল করায় জণগন তা মেনে নেবে না। তবে হলদিয়া বিধানসভা এলাকাতেও এবারে তৃণমূল ১১,৪৯৫ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান ছিল প্রায় ২৫০০। তৃণমূলের দাবি, উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষের মন বুঝেই যে বাম কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, এই ভোটে তা প্রমাণ হল।
হলদিয়ায় খারাপ ফলের জন্য অবশ্য দলকেই দায়ী করে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমালিকা পণ্ডা শেঠ বলেন, “সিপিএমের আন্দোলনের শক্তি নেই। তাদের ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। মানুষ একথা উপলব্ধি করেছেন। তাই সারা রাজ্যের সঙ্গে হলদিয়াতেও বিপর্যয় হয়েছে।” সিপিএম হলদিয়া বিধানসভা এলাকার ৩৫টি বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে না পারার অভিযোগ তুলেছিল। তারমধ্যে ২৬টি বুথই হলদিয়া পুর এলাকায়। এ দিন তমালিকাদেবী দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তোপ দেগে বলেন, “দলীয় নেতৃত্ব দলীয় কর্মীদের অমার্যাদা করায় এই অভাবনীয় খারাপ ফল হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “ভোটে জিতলাম, কিন্তু দায়িত্ব নিলাম না। ক্ষমতায় গেলাম না। তারপর সরকার ফেলে দিলাম। দলীয় নেতৃত্বের দিশাহীন বক্তব্যের জন্যই মানুষ সিপিএমের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।”
লক্ষ্মণ প্রশ্নে দলে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে ইব্রাহিক আলিকে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কও লক্ষ্য ছিল বামেদের। তবে লক্ষ্মণ শেঠ বহিষ্কৃত হওয়ার পর দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ অনুগামী নেতা-কর্মীদের সক্রিয়তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন ওঠে। হলদিয়ার শ্রমিকদের ভোটও আগের বারের থেকে বেশি পেয়েছেন শুভেন্দুবাবু। তাঁর দাবি, নতুন শিল্প আনার প্রশ্নে ও হলদিয়ার কারখানাগুলিতে শ্রমিক-কর্মীদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রিত থাকায় ও শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শ্রমিকরা আমার পাশে থেকেছেন।
নন্দীগ্রামে দলের খারাপ ফলের কারণ কি?
এক্ষেত্রেও স্বামী লক্ষ্মণ শেঠের পাশে থেকে দলকে দায়ী করে তমালিকাদেবীর বক্তব্য, “তাঁর অনুপস্থিতি দলের খারাপ ফলের একটা কারণ। দলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে তিনি মামলার শিকার। দল শুধু সাধারণ বক্তব্য দেওয়া ছাড়া কোনওভাবে তার পাশে থাকেনি।” তিনি আরও বলেন, “দল নন্দীগ্রামকে ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ করতে চাইছে। আসলে ওদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।” জয়ের পর শুভেন্দুবাবু বলেন, “সর্বত্রই আমার ভোট বেড়েছে। সাংসদ হিসেবে আমার কাজ ও রাজ্য সরকারের উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষ আস্থা রেখেছেন। জেলায় রাজনৈতিক শান্তির পক্ষেও মানুষ ভোট দিয়েছেন।” তাঁর দাবি, নন্দীগ্রামে সিপিএম এখনও ঘৃণার বস্তু। নন্দীগ্রামের শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে মানুষ আরও বেশি ভোট দিয়েছেন।
এ দিন ভোটের ফল ঘোষণার পর শুভেন্দুবাবুকে ফোন করে অভিনন্দন জানান শেখ ইব্রাহিম আলি। শুভেন্দুবাবুও ফোনে ইব্রাহিমকে শুভ কামনা জানিয়ে বলেন, “তমলুক লোকসভা এলাকার কোথাও উন্নয়নের প্রয়োজন বোধ করলে অবশ্যই আমাকে চিঠি লিখে জানান, তাহলে আমি তা করব।”
এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোলাঘাটের গণনাকেন্দ্রে গিয়ে কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে দেখা করে কেটিপিপি’র অতিথিশালায় ছিলেন শুভেন্দুবাবু। পরে গণনা শেষে জয়ের শংসাপত্র নিয়ে হলদিয়ায় সাংসদ কার্যালয়ে আসার পথেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
জিতে উঠে আত্মপ্রত্যয়ী শুভেন্দুবাবুর বক্তব্য, “সোমবার থেকেই কাজ শুরু করব। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদে যাবো। অনেক দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে।”