নয়া প্রযুক্তির সাহায্য কৃষি সহায়কদের

রোগ পোকার প্রতিকার, কৃষি পণ্যের বাজার দর-সহ কৃষিজীবীদের নানা তথ্য এবং পরামর্শ দিতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারবেন কৃষি প্রযুক্তি সহায়কেরা (কেপিএস)। যেমন, মাঠে গিয়ে কি রোগ পোকার আক্রমণ হয়েছে, কেপিএস-রা তা নিয়ে ধন্দে থাকলে ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত ট্যাবের মাধ্যমে তার ছবি তুলে কৃষি দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। পরীক্ষা করে দফতরের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দেবেন কী সমস্যা, প্রতিকারেই কী পদক্ষেপ জরুরি।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

রোগ পোকার প্রতিকার, কৃষি পণ্যের বাজার দর-সহ কৃষিজীবীদের নানা তথ্য এবং পরামর্শ দিতে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারবেন কৃষি প্রযুক্তি সহায়কেরা (কেপিএস)। যেমন, মাঠে গিয়ে কি রোগ পোকার আক্রমণ হয়েছে, কেপিএস-রা তা নিয়ে ধন্দে থাকলে ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত ট্যাবের মাধ্যমে তার ছবি তুলে কৃষি দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। পরীক্ষা করে দফতরের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দেবেন কী সমস্যা, প্রতিকারেই কী পদক্ষেপ জরুরি।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের উপ কৃষি অধিকর্তা (বিশ্বব্যাঙ্ক প্রকল্প) সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, “চলতি আর্থিক বছরে প্রত্যেককে ট্যাব তুলে দেওয়া হবে।”

চাষে প্রযুক্তির ব্যবহার হলে নানা সমস্যার মোকাবিলায় তাঁদের সুবিধেই হবে, মত কৃষিজীবীদের। মহিষাদলের কেশবপুর জালপাই গ্রামের কৃষিজীবী নিশিকান্ত মাইতি বলেন, “মাঠের সমস্যার কথা কৃষি সহায়কদের মাধ্যমে দ্রুত দফতরে জানাতে পারব।” নন্দকুমারে ভবানীপুর এলাকার রতন ভৌমিক বছরভর সব্জি চাষ করেন। তাঁর বক্তব্য, কোনও কোনও রোগপোকা এক দিন, দু’দিনের মধ্যেই গোটা মাঠে ছড়িয়ে গিয়ে চাষের ব্যাপক ক্ষতি করে। ছবি তুলে দ্রুত তার সমাধান করা গেলে চাষটা বাঁচবে। এমন সিদ্ধান্তে খুশি মাঠে মাঠে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয় যাঁদের, সেই কেপিএসরাও।

Advertisement

তবে কৃষিজীবীরা প্রশ্ন তুলছেন, সব সময় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের দেখা মেলে না। কেন? কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কারণটা আর কিছুই নয় আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মতো এখানেও লোকের অভাব। পূর্ব মেদিনীপুরের ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২২৬টি কেপিএস পদের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে আছেন অর্ধেকেরও কম, ১০৬ জন। ফলে এক, এক জন সহায়ককে দুটি, তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্ব সামলাতে হয়। যেমন মহিষাদলের ইটামগরা ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত, গড়কমলপুর ও কিসমত নাইকুন্ডি পঞ্চায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন এক জন কেপিএস, তিনি আনন্দদুলাল কপাট। বুলালচন্দ্র দাস নন্দকুমারের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন।

কেপিএস এবং কৃষিজীবীদের দাবি, প্রকল্পের যথার্থ সুফল পেতে অবিলম্বে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। জেলার উপকৃষি অধিকর্তার জবাব, রাজ্য সরকার কেপিএসের শূন্যপদে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে। দ্রুত সে প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে তাঁর আশা। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কেপিএসদের যে ট্যাব দেওয়া হবে তাতে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াও ‘জিপিআরএস’ সিস্টেম চালু থাকবে। জিপিআরএস কেন? এ ছাড়াও ট্যাবে ‘মাটির কথা’ বলে একটি পোর্টাল থাকবে। তাতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ থেকে শুরু করে কৃষি পাঠশালা, কৃষি সংক্রান্ত নানা জিজ্ঞাসা, কৃষি বাজারদর, আবহাওয়ার খবর, নানা প্রকল্পের তথ্য, আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান-সহ নানা তথ্য থাকবে। হাতের মুঠোয় সেই তথ্য থাকায় তা কৃষিজীবীদের জানাতে পারবেন কেপিএসরা।

শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়া চালু হলে কৃষি সংক্রান্ত সমস্যার আরও দ্রুত সমাধান করা যাবে। কেমন? এত দিন কেপিএসরা মাঠে গিয়ে প্রতিকার বাতলে দিতেন। আর রোগ ধরতে না পারলে ফোনে ব্লক অফিসের বিশেষজ্ঞদের রোগের লক্ষ্মণের খুঁটিনাটির বিবরণ দিতেন। তা শুনেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলত। নতুন প্রক্রিয়া চালু হলে শোনার পাশাপাশি উপসর্গের একটি স্পষ্ট ছবিও চোখের সামনে দেখতে পাবেন বিশেযজ্ঞরা। তাতে দ্রুত এবং সঠিক প্রতিকারও সম্ভব হবে। নতুন প্রকল্পের কথায় এক কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের রসিকতা, ‘‘এত দিন নামের মাঝে ‘প্রযুক্তি’ শব্দটি বাহুল্য মনে হত। উন্নতমানের ট্যাব হাতে পেলে নাম সার্থক হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন