জনসংযোগের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলির বইয়ের স্টল। (বাঁ দিকে) মীরবাজারে সিপিএমের, (ডান দিকে) কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিজেপির স্টল।
পুজোর আবহেও লড়াই জারি!
মেদিনীপুরের শহর এবং শহরতলিতে এ বার পুজোর স্টল ঘিরেও ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে। সিপিএম, তৃণমূলের সঙ্গেই সেই লড়াইয়ে সামিল হচ্ছে বিজেপিও।
শারদ উৎসবে রাস্তার ধারে, মণ্ডপের কাছাকাছি জায়গায় জনসংযোগের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বইপত্রের স্টল নতুন নয়। সেই কবে থেকে মার্কসীয় লেখালেখির স্টল হয়ে আসছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বছর কয়েক আগে তৃণমূলও স্টল বসানো শুরু করে। এ বার তাতে সামিল বিজেপিও। একে অপরকে টেক্কা দিতে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো। সকলেই চাইছে, বেশি স্টল করে পথচলতি মানুষের মন টানতে।
সোমবারই মেদিনীপুর শহরে সিপিএম, বিজেপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে তৈরি একাধিক স্টলের উদ্বোধন হয়েছে। সদর শহরের মীরবাজারে সিপিএমের জেলা অফিসের সামনে একটি স্টলের উদ্বোধন করেন দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে বিজেপির একটি স্টল হয়েছে। এটির উদ্বোধন করেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সিংহ। মঙ্গলবার তৃণমূলের উদ্যোগে তৈরি স্টলের উদ্বোধন করেছেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপকবাবু বলেন, “দলের উদ্যোগে প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় স্টল হয়। সেখানে পত্রিকা-পুস্তিকা থাকে। আমাদের কয়েক’টি গণ-সংগঠনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু বলেন, “এ বার আমরা দলের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় স্টল করছি। মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো শহরেও স্টল হচ্ছে। দলের কর্মীরাও এ নিয়ে বেশ উৎসাহী।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় জানান, এ বারও বিভিন্ন এলাকায় স্টল হবে।
এসইউসির জেলা সম্পাদক অমল মাইতির কথায়, “স্টলে নানা পুস্তিকা থাকে। দলের আদর্শই জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়। পুজো দেখতে অনেকেই বেরোন। ফলে বহু মানুষের কাছে দলের আদর্শ তুলে ধরার সুযোগ পাই।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, “স্টলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে অবহতি করা যায়। শুধু তো রাজনৈতিক লেখার বই নয়, স্টলে অন্য নিবন্ধেরও বই থাকে।”
মেদিনীপুর শহরে মার্কসীয় বইপত্রের গ্রন্থাগার রয়েছে। সিপিএমের উদ্যোগে এই গ্রন্থাগার তৈরি হয়। পুজোর স্টলের জন্য বাড়তি বইপত্রের প্রয়োজন হয়। চাহিদা মতো বইপত্র কলকাতা থেকে আনানো হয়। আসে দলের মুখপত্র এবং গণ- সংগঠনগুলোর মুখপত্রের শারদীয় সংখ্যাও। তৃণমূল, বিজেপির মতো দলগুলোর অবশ্য জেলায় কোনও গ্রন্থাগার নেই। পুজোর স্টলের জন্য কলকাতা থেকেই বইপত্র আনানো হয়। সোমবারই তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী কলকাতায় যান বই আনতে। কয়েক’শো পত্রিকা-পুস্তিকা ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কিছু বই আনা হয়েছে ।
রবীন্দ্রনগরে তৃণমূলের স্টল।
মূলত, জনসংযোগের উদ্দেশেই পুজোর সময় বইপত্রের স্টল করে রাজনৈতিক দলগুলো। পুজো মানেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো। নানা সাজের প্রতিমা, আলোকসজ্জা দেখা। এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে যাওয়ার পথেই অনেকে এই সব স্টলে ঢুঁ মারেন। বইপত্র পড়তে পড়তেই খানিক জিরিয়ে নেন। আগে শারদ উৎসবের সময় মার্কসীয় সাহিত্যের স্টলই বেশি চোখে পড়ত। বছর কয়েক হল ছবিটা বদলেছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর এখন শহরতলিতেও স্টল করছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “এটা ঠিক, আগে দলের অনেকে স্টল নিয়ে উৎসাহ দেখাতেন না। বইপত্র বিক্রি হওয়ায় এখন উৎসাহ দেখাচ্ছেন।” জেলা সিপিএমের এক নেতা অবশ্য বলেন, “আমরা যা করি, ধারাবাহিক ভাবে করি। আগে যে সব এলাকায় স্টল হয়েছে, এ বারও সেই সব এলাকায় স্টল করার চেষ্টা চলছে।”
ইতিমধ্যেই স্টলে স্টলে ঝাড়াই-বাছাই করে চাহিদা মতো বইপত্র পাঠানো নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে। কিন্তু, স্টলের ভিড়ে কে কাকে ছাপিয়ে যায়, সেটাই দেখার!
—নিজস্ব চিত্র।