হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শারদীয়ার সূচনা হয় বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গেই। নতুন জামা পরে মণ্ডপে বেড়ানোর সেটাই বোধহয় শুরু। বন্দর শহর হওয়ায় এক মিশ্র সংস্কৃতি হলদিয়ার জনজীবনের পরতে পরতে লেগে রয়েছে। ফলে হলদিয়ার ফ্যাশন এবং জীবনযাত্রায় রয়েছে বৈচিত্রও।
হলদিয়া টাউনশিপ ও দুর্গাচক এলাকায় আধুনিক ফ্যাশনের কদর যথেষ্ট রয়েছে। এই অঞ্চলেই রয়েছে একাধিক নামীদামী বুটিকের দোকান। সেখানেই ঢুঁ মেরে জানা গেল, এ বার ভেলভেটের শাড়ির খুব কদর। হাফ নেটেরও চাহিদা রয়েছে। হ্যান্ডলুমের কাজ করা শাড়ি এবং সালোয়ারেরও যথেষ্ট চাহিদা। দুর্গাচকের নাট্যকর্মী তিথি দে বলেন, “হলদিয়ার সব কিছুতেই একটু আলসেমি রয়েছে। কলকাতায় যা পুরনো হয়ে যায় তাই আসে হলদিয়ায়। পুজোয় আমি ভেলভেটের শাড়ি পরব।” পশ্চিমি পোশাকের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র্য। জিন্সের বদলে এ বার বাজারে এসেছে জেগিংস, রঙিন জিন্স। বেশ কয়েক বছর আগে কুর্তার চল ছিল। এবার সেই জায়গা অনেকটাই চলে গিয়েছে ছোট টপের দখলে। হলদিয়া টাউনশিপের বাসিন্দা এক কিশোরীর কথায়, “এবার আমি রঙিন জিন্স আর অনেকগুলো ফ্যাশনদুরস্ত টপ কিনেছি।” টাউনশিপের কল্লোলের বাসিন্দা ত্রয়ীর এ বার পছন্দের তালিকায় রয়েছে এমব্রয়ডারি এবং পোলো শার্ট।
চুড়িদারের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। আগে হাঁটুর নিচ ছাড়িয়ে যেত সালোয়ারের দৈর্ঘ্য। এখন হাঁটুর বেশ কিছুটা উপরেই থাকছে সালোয়ারের গণ্ডি। সঙ্গে হারেম প্যান্ট বা চুড়িদার পা-ও চলতে পারে। তবে এ বার বাজার মাতাচ্ছে পাখি বা আনারকলি চুড়িদার। আর এই সবের নেপথ্যে রয়েছে মূলত সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা। মাখনবাবুর বাসিন্দা রুবি রায় জানিয়েছেন, লং চুড়িদার তিনি পুজোয় কিনেছেন। সঙ্গে হাতে পরবেন মানানসই চুড়ি। হলদিয়ার মিনারা খন্দকারের দীর্ঘদিন ধরেই বাটিক পোশাকের ব্যবসা। তিনি বলেন, “শেষ মুহূর্তে ভিড় ভালই। মানুষ ফ্যাশনের ক্ষেত্রে ট্রাডিশনাল জিনিস খুঁজছেন। তবে তরুণীরা নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পিছুপা হচ্ছেন না।”
মহিষাদলে পোশাকের বিক্রিবাটা ভালই। হলদিয়া, সুতাহাটা থেকেও সাধারণ মানুষ কেনাকাটার জন্য যান এখানে। এখানে কেনাকাটা করতে আসা তানিয়া, রঞ্জিতার কথায়, “পাটলা জামদানি এবং ঢাকাই জামদানি এ বার পুজোয় হিট। ছোট ছেলে মেয়েদের হারেম শার্ট-প্যান্ট এর স্টাইল এ বার চলছে। আমরাও তাই কিনব।” ছেলেদের মোদী জ্যাকেট এ বার ভীষণভাবে ‘ইন।’ সঙ্গে প্যান্ট, শার্ট, ডেনিম জিন্স তো রয়েছেই। চৈতন্যপুরের যুবক সুশোভন পাত্র অবশ্য বললেন, “ফ্লিপকার্ট থেকে জামা কিনেছি। নতুন যে মল খুলেছে সেখান থেকে পাঞ্জাবিও কিনব।”
শুধুমাত্র জামা কাপড় নয়, জেল্লা বাড়াতে সেলুন এবং পার্লারেও ভিড় বাড়ছে। ব্রজলালচকে একটি পার্লার খুলেছেন সুদীপা সেন। তাঁর কথায়, “নানা রকম স্পা করতে ভিড় হচ্ছে। পুজোর কাছাকাছি সময়ে ফেসিয়াল করতেও আসছেন অনেকে। এই ভিড়ে যেমন রয়েছেন কিশোরী, যুবতীরা। তেমনই মধ্য বয়সীদের ভিড়ও রয়েছে।” হলদিয়া টাউনশিপের স্পা মালিক রবি মান্না জানা, এ বার চুলে কমবয়সীদের হাইলাইট করার প্রবণতা বেশি। শুধু তাই নয় এবার কমবয়সীদের মধ্যে নখরঞ্জনীতে শিল্প ফুটিয়ে তোলারও বেশ চাহিদা।
পুজোর জামার সঙ্গে মানানসই গয়না কিনতে কিনতে এক অষ্টাদশীর কথায়, “অনলাইনে কেনাকাটা তো সারা বছর করা যায়। কিন্তু পুজোর সময় ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটার মজাই আলাদা।”