পাথরায় সেতু নির্মাণে বরাদ্দ পাঁচ কোটি, কাজ শুরু শীঘ্রই

পাথরা যাওয়ার রাস্তার উপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করল সরকার। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “টাকা পাওয়া গিয়েছে। এ বার দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৯
Share:

হাতিহলকার বেহাল সেতু দিয়ে ঝুঁকির যাতাযাত। —নিজস্ব চিত্র।

পাথরা যাওয়ার রাস্তার উপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করল সরকার। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “টাকা পাওয়া গিয়েছে। এ বার দ্রুত দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

Advertisement

পাথরার সেই সেতুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। পাথরা ঢোকার আগেই কলাইচণ্ডী সেতুর উপর থাকা সেতুটি বহু বছর আগেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গত বছরের বর্ষায় তা ভেঙেও পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরেই সেতুর উপর দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে কিছু গাড়ি চলাচল করছিল। কিন্তু কতদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা যায়? পাথরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু গ্রামের মানুষ ওই সেতুর উপর নির্ভরশীল। এলাকাটি কৃষি প্রধান। ভাল সব্জি চাষও হয়। সেই সব সব্জি কোন পথে নিয়ে যাবেন মানুষ। এছাড়াও মন্দিরময় পাথরার পুরাকীর্তি দেখতেও বহু পর্যটক ভিড় জমান। তাঁরাই বা কিভাবে যাবেন? তাই দ্রুত গতিতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু অর্থ পাওয়া যাবে কোথা থেকে? অর্থের সংস্থান করতে করতে প্রায় এক বছর গড়িয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষও বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই ভাঙা সেতুর উপর দিয়েই পথ চলাচল শুরু করেন। যে কোনও সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যেত।

সেতু নির্মাণের কাজ হলেও এখনও পাথরার বহু কাজই বাকি। মেদিনীপুর সদর ব্লকে কাঁসাই নদীর তীরে থাকা পাথরা গ্রামটিতে বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে মন্দিরগুলি সংরক্ষণের দাবিতে লড়াই শুরু করেছিলেন ইয়াসিন পাঠান। তাঁর মতে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বিদ্যানন্দ ঘোষাল এই সব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে ২০০৩ সালে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ৩৪টি মন্দির-সহ সংলগ্ন প্রায় সাড়ে ৯ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। শুরু হয় সংস্কার। ৩৪টি মন্দিরের মধ্যে ২৮টির সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু বাকি মন্দিরগুলির জীর্ণ দশা কাটেনি। ২০১০ সালে এ জন্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই টাকায় অধিগৃহীত জমির মূল্য মালিককে দেওয়া ছাড়াও বাকি মন্দিরগুলি সংস্কার করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু জমির মূল্য নির্ধারিত না হওয়ায় এখনও কাজ শুরু করা যায়নি।

Advertisement

পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের কলকাতা চক্র সূত্রে জানা গিয়েছে, জমির মালিকদের দাম না মিটিয়ে সংস্কার কাজ করা যায় না। তাই দেরি হচ্ছে। ২০০৩ সালে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। ১০ বছরেও কেন জমির দাম মেটানো যায়নি? পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “জমির মূল্য জানতে চেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা যে রিপোর্ট পাঠিয়ে ছিলেন তাতে জমির দাগ নম্বর ভুল ছিল। তা সংশোধন করে ফের জমির প্রকৃত মূল্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তা জানালেই জমির দাম মিটিয়ে দেওয়া হবে।” মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ শুরু করেছি।” কিন্তু এই সামান্য কাজটুকু করতে কেন এত টালবাহানা? এ বিষয়ে অবশ্য জেলার প্রশাসনিক কর্তারা নীরব। আর তাতে কিছুটা হতাশ মহম্মদ ইয়াসিন পাঠান। এই মানুষটিই মন্দির সংরক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন ১৯৭৪ সাল থেকে। ইয়াসিন পাঠানের মতে, “দ্রুত কাজটি শেষ হলে ভাল হত। তাতে মন্দির গুলি যেমন সুরক্ষিত হত তেমনই দূরদূরান্ত থেকে আরও বহু পর্যটকও আসতেন। তাতে এলাকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামোরও উন্নয়ন ঘটত। যাতে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হয় সে জন্য প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছি।”

পাথরায় রয়েছে নবরত্ন, শীতলা, দুর্গামণ্ডপ, পঞ্চবটির আসন, সর্বমঙ্গলা, শিব মন্দির প্রভৃতি। প্রাচীন এই মন্দিরগুলি ভেঙেচুরে নষ্ট হতে বসেছিল। ভেঙে পড়ছিল মন্দিরের কারকার্য। আগাছায় ভরা মন্দিরে ছিল সাপের আড্ডা। প্রাচীন এই মন্দিরগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে বুঝে ১৯৭৪ সাল থেকে চুয়াডাঙা হাইস্কুলের করণিক মহম্মদ ইয়াসিন পাঠান মন্দির সংরক্ষণে উদ্যোগী হন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। পুরাতত্ব সবের্ক্ষণ দফতরের কলকাতা ও দিল্লি অফিসেও ছুটেছেন বারেবারে। তাঁর প্রচেষ্টাতেই পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ মন্দির অধিগ্রহণে উদ্যোগী হয়। পাথরাকে ঘিরে নানা ধরনের পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৪টি মন্দিরকে সংরক্ষণ করে তার পাশে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা, পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসন তৈরি করা, বিনোদনের জন্য পার্ক, নৌকাবিহারের ব্যবস্থা, নদীর তীর ধরে বাগান, সেতু ও রাস্তা উন্নয়নের করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেতুটি ভেঙে পড়ায় অবশ্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর নতুন সেতু নির্মাণে অর্থ দিয়েছে। কিন্তু বাকি কাজ কবে হবে? পুরাতত্ত্ব সবের্ক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, জমির দাম মেটানোর পরেই সেই কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন