প্রচারে শেখ আনোয়ার আলি। —নিজস্ব চিত্র।
একজন প্রবীণ, অন্যজন তুলনায় নবীন। তবে দু’জনেরই রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই।
লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শেখ আনোয়ার আলি ও কাঁথির প্রার্থী হিসাবে কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা হতেই প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ও আইনের স্নাতক শেখ আনোয়ারের বাড়ি চণ্ডীপুরের বরাঘুনি গ্রামে। ৬৬ বছরের আনোয়ার আইনজীবী। ১৯৭০ সাল থেকে কলকাতা হাইকোর্টে কর্মরত। তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের আইনজীবী সেলের হাইকোর্ট শাখার চেয়ারম্যান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতিও। ২০০৬ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে তিনি হেছিলেন। লোকসভা ভোটে অবশ্য এই প্রথমবার। রবিবার তমলুকের জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকের পর হলদিয়ার চৈতন্যপুরে প্রচারের উদ্দেশে বের হন তিনি।
কী কী বিষয় নিয়ে প্রচার চালাবে দল? জয় নিয়ে আশাবাদী আনোয়ার বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে মানুষের সমর্থন চাওয়া হবে।’’ জেলার ক্ষেত্রে কংগ্রেস প্রার্থীর অন্যতম লক্ষ্য হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। কেন? তাঁর ব্যাখ্যা, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে গত ক’য়েক বছরে শিল্পে আশানুরূপ বিনিয়োগ হয়নি। ফলে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তাই এতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়াও তমলুক-হলদিয়া সহ জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের আশ্বাস দেন তিনি।
তবে, সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও মানছেন এই কংগ্রেস প্রার্থী। রবিবার আনোয়ার বলেন, “২০০৯ সালের লোকসভা ও ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হওয়ায় এখানে দলের প্রার্থী ছিল না। এর ফলে সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল। তবে এখন আমরা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ বারের নির্বাচনে আমরা একক ভাবে লড়ায় কর্মীরাও উজ্জীবিত হয়েছেন।”
তমলুক কেন্দ্রের আনোয়ার আলির মত প্রবীণ প্রার্থীর পাশাপাশি কাঁথি লোকসভায় কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে অপেক্ষাকৃত নবীন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ নেতা কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা ৪১ বছরের কুণালের মেদিনীপুর কলেজে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি। দীর্ঘ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি থাকা কুণাল এখন সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের নির্বাচন সংক্রান্ত বিভাগ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের পদে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত।
দলের যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় পদের দ্বায়িত্ব সামলাতে গিয়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল, ত্রিপুরা, আসাম-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন কুণাল। পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি কুণাল ছাত্রাবস্থা থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করলেও এ বারই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর রবিবার কাঁথি মহকুমা কার্যালয়ে দলের ব্লক ও জেলা নেতৃত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন কুণাল। সেখানে প্রচারের বিষয় উল্লেখ করে কুণাল বলেন, “জাতীয় কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শ তুলে ধরাই হবে প্রচারের মূল বিষয়।” লক্ষ্য কেন্দ্রে স্থায়ী, জনমুখী ও ধর্ম-নিরপেক্ষ সরকার গঠন। এ দিন তিনি বলেন, “কাঁথিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক রূপায়ণের মাধ্যমে উন্নয়নে উদ্যোগী হব।”
রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই কঠিন, তা মানছেন দুই প্রার্থীই। তবে তাঁদের কেউই আপাতত প্রতিদ্বন্দ্বী কে নয়, মনঃসংযোগ করতে চান জনসংযোগেই।