কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হল রবিবার। জেলায় জেলায় পুরভোটের প্রার্থী বাছাইও শুরু করে দিয়েছে শাসক দল। সে ক্ষেত্রে উঠছে গোষ্ঠী কোন্দলের ছবি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি পুরসভায় এ বার ভোট। নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে ২৫ এপ্রিল ভোট ধরেই চলছে প্রস্তুতি। ঘাটালের পাঁচটি পুরসভাতেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের জোর কোন্দল শুরু হয়েছে। এক একটি ওয়ার্ডে দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য তিন-চার জনের নাম উঠে আসছে। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নেমেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এখন সব পুরসভাতেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। কোথাও কোন্দল থাকতেই পারে। নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে তা মীমাংসা করবেন।” দীনেনবাবুর আরও সংযোজন, “দলের রাজ্য কমিটির নির্দেশ মেনেই প্রার্থী তালিকা তৈরি হচ্ছে। কোনও কাউন্সিলর, এমনকী চেয়ারম্যানের নামেও দুর্নীতির প্রমাণ মিললে তাঁদের প্রার্থী করা নিয়ে দল চিন্তাভাবনা করবে।”
ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, খড়ার ও রামজীবনপুর এই পাঁচটি পুরসভারই বয়স ১৪০ বছরের বেশি। এই এলাকাগুলিতে এখন ভোটের মেজাজ। চা দোকান থেকে পাড়ার আড্ডা, সব জায়গাতেই জোর আলোচনা চলছে ভোট নিয়ে। সমান্তরাল ভাবে প্রকাশ্যে আসছে প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। যেমন, ঘাটাল পুরসভায় ১৭টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে প্রাথমিক ভাবে এক জনের নাম চূড়ান্ত হলেও বাকি ওয়ার্ডগুলিতে চলছে কোন্দল। রাজ্য থেকে প্রার্থী তালিকা তৈরির জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তাতে এলাকার বিধায়ক, চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্লকের দলীয় সভাপতিরা আছেন। ঘাটালে এখন বিধায়ক শঙ্কর দোলই গোষ্ঠীরই প্রাধান্য। ব্লক সভাপতি থালকেও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা খুব একটা সক্রিয় নয়। শঙ্করবাবুই সব ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নিয়ে বসে প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন। তবে মতানৈক্য না থাকায় একই ওয়ার্ড থেকে তিন-চারজনের নাম উঠে আসছে। ঘাটাল শহরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ব্লক সভাপতি অজিত দে নিজেই দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্লক সভাপতি নিজে একটা তালিকা তৈরি করছেন। প্রতিদিনই এই নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও হচ্ছে।
খড়ারেও একই চিত্র। বর্তমান চেয়ারম্যান উত্তম মুখোপাধ্যায়ের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। আগে থেকেই উত্তমবাবুর সঙ্গে দলের বর্তমান চার কাউন্সিলরের দ্বন্দ্ব রয়েছে। একাধিক বৈঠকে ওই চার কাউন্সিলর উপস্থিত হননি। একটি গোষ্ঠী উত্তমবাবুকে প্রার্থী করতেও চাইছে না। গত পাঁচ বছরে চেয়ারম্যানের প্রতি পুর-নাগরিকদের একাংশ ক্ষুব্ধ। সেই বিষয়টি সামনে রেখে বিরোধী গোষ্ঠী উত্তমবাবুকে প্রার্থী করতে চাইছে না। কিন্তু উত্তমবাবু বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের কাছের বলে পরিচিত। তাই তাঁর প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু কোন ওয়ার্ড থেকে তিনি প্রার্থী হবেন, তা স্থির হয়নি।
চন্দ্রকোনা পুরসভাতেও চেয়ারম্যান রাম কামিল্যা ও উপ-পুরপ্রধান রণজিৎ ভাণ্ডারীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন দলেরই একটি গোষ্ঠী। ওই দু’জন এবং আরও কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন নতুন কাউকে প্রার্থী করার দাবি উঠছে। আর চেয়ারম্যান গোষ্ঠীর লোকজন ফের রামবাবুকে প্রার্থী করতে দলের উপর মহলে ছোটাছুটি করছেন। এখানে মোট ১২টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডে একাধিক নাম উঠে এসেছে। তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কমিটির সদস্যদের নাস্তানুবাদ হতে হচ্ছে।
ক্ষীরপাই পুরসভায় সমস্যা তুলনায় কম। এখানে শুধু একটি ওয়ার্ড নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তৃণমূলের স্থানীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে প্রার্থী তালিকা তৈরি করে জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পানের ওয়ার্ড এ বার সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বলে খবর।
রামজীবনপুরেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতি ঘাটাল, খড়ার বা চন্দ্রকোনার মতো নয়। এখানে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে পুরপ্রধান শিবরাম দাসের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছিল। কয়েকজন অনুগামী কাউন্সিলরকে নিয়ে নিজের মতো করে পুরসভা চালানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এখানেও নতুন মুখের দাবি উঠছে। শেষ পর্যন্ত কোন্দল মিটিয়ে শাসক দল কাদের প্রার্থী করে, সেটাই দেখার।