প্রকল্পে গরমিল, নালিশ

গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন ফরিদা খাতুন (বিবি)। স্বামীর নাম নবকুমার। কোনও পদবি নেই। ফরিদা খাতুন বা নবকুমারের সন্ধান নেই। তৃণমূলের দখলে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে উপভোক্তার তালিকায় এমন হরেক গোলমাল রয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:০৫
Share:

গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন ফরিদা খাতুন (বিবি)। স্বামীর নাম নবকুমার। কোনও পদবি নেই। ফরিদা খাতুন বা নবকুমারের সন্ধান নেই।

Advertisement

তৃণমূলের দখলে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে উপভোক্তার তালিকায় এমন হরেক গোলমাল রয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য থেকে শুরু করে যাঁদের পাকা বাড়ি বা পোক্ত মাটির বাড়ি রয়েছে, তাঁদের নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলেরই একাংশ তা নিয়ে সরব। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। সভাধিপতির নির্দেশ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছেন বিডিও সুরজিত্‌ ভড়। তাঁর কথায়, “তদন্ত শেষ হলেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্ভু নায়েক জানালেন, পঞ্চায়েত থেকে তালিকা পাওয়ার পরে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্যরা মিলে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন নানা দিক থেকে অভিযোগ আসার পরে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা সভাপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “তদন্তে গাফিলতি দেখা গেলেই নাম বাতিল করা হবে।”

সম্প্রতি চন্দ্রকোনা-১ ব্লক গীতাঞ্জলি প্রকল্পের তালিকা চূড়ান্ত করার পর মঞ্জুর করে। সেই তালিকা পাওয়ার পরেই দেখা যায়, গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য ডলি পাল, রিঙ্কু বসাক, শেখ হুমায়ুনের স্ত্রী হাফিজা বেগম, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা জয়ন্তী রায়দের নাম রয়েছে তালিকায়। কী করে আপনাদের নাম তালিকায় এলো? আপনাদের কি বাড়ি নেই। প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন জয়ন্তীদেবী। আর হুমায়ুন বলেন, “আমি ছিটেবেড়ার বাড়িতে থাকি। পঞ্চায়েত সদস্য বলে কি গরিব হতে পারি না। তাই আমার স্ত্রী-র নামে বাড়ি দিয়েছে পঞ্চায়েত।”

Advertisement

ব্লক প্রশাসনের পাশাপাশি তদন্ত করছে পঞ্চায়েত সমিতিও। ছবি-সহ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা পরিষদ। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে নেমে দু’-একজনের পাকা বাড়ি পাওয়া গিয়েছে। তবে তা অনেক পুরনো। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “এখন সংশ্লিষ্ট উপভোক্তা দাবি করছেন, তাঁরা এখন ওখানে থাকেন না। ভাইয়েরা ওখানে থাকেন। তাঁদের কোনও বাড়ি নেই।” মিলেছে পোক্ত মাটির বাড়িও। সে ক্ষেত্রে উপভোক্তার দাবি, সেই মাটির বাড়ি বর্ষায় ভেঙে পড়তে পারে। তাই নতুন বাড়ি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন।

তৃণমূলেরই স্থানীয় নেতাদের কথায়, “এমন বহু গরিব মানুষ রয়েছেন যাঁরা বহু কষ্টে ত্রিপল খাটিয়ে থাকেন। তাঁরা বাড়ি পাচ্ছেন না। অথচ যাঁদের পাকা বাড়ি, দোতলা মাটির বাড়ি রয়েছে, তাঁরা বাড়ি পেলেন।”

অভিযোগ, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দলীয় নেতাদের কয়েকজনকে যেমন বাড়ি পাইয়ে দিয়েছে তেমনই অর্থের বিনিময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকেও বাড়ি দেওয়া হয়েছে। ১৩০ জন উপভোক্তার তালিকায় প্রায় ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রেই এমন গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে তৃণমূলের স্থানীয় যুব নেতা শঙ্কর চৌধুরীর কথায়, “দল অস্বচ্ছতা মেনে নেবে না। তাই অভিযোগ পাওয়ার পরেই তো তদন্তও শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন