প্রচারের প্রস্তুতিতেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

প্রার্থী একজন। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও রেলশহরে তৃণমূলের ঐক্য নেই। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের প্রচার নিয়ে শনিবার তৃণমূলের দুই শিবিরের ভিন্ন প্রস্তুতি সভাতেই ধরা পড়ল সেই ছবি। প্রচার কেমন হবে তা ঠিক করতে আলাদা করে কর্মিসভার আয়োজন করেছিলেন জেলা তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য জহরলাল পাল ও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২
Share:

প্রার্থী একজন। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও রেলশহরে তৃণমূলের ঐক্য নেই। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের প্রচার নিয়ে শনিবার তৃণমূলের দুই শিবিরের ভিন্ন প্রস্তুতি সভাতেই ধরা পড়ল সেই ছবি। প্রচার কেমন হবে তা ঠিক করতে আলাদা করে কর্মিসভার আয়োজন করেছিলেন জেলা তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য জহরলাল পাল ও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী।

Advertisement

রেলশহরে গত পুরসভা নির্বাচনের পর থেকেই দেবাশিস চৌধুরী ও প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের সম্পর্কের চিঁড় ধরার গুঞ্জন চলছিল। একাধিক সংঘর্ষ, দোষারোপ, দলীয় কর্মসূচি বয়কটের ঘটনার মাধ্যমে বারবার সামনে এসেছে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দল। পুরসভায় অনাস্থা ভোটে কংগ্রেসের জয় নিয়ে তৃণমূলের এই দুই শিবির এখনও পরস্পরকে দোষারোপ করে। এ দিকে নিমপুরা রেল ইয়ার্ডের শ্রমিক সংগঠনের দখল নিয়েও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দল। স্বভাবতই লোকসভা নির্বাচনেও ছবিটা যে বদলাবে না তা আঁচ করতে পারছিল রেলশহরের রাজনৈতিক মহল। জেলা নেতৃত্ব একাধিকবার সমস্ত কিছু মিটমাট করে একত্রে লড়াই করার কথা বললেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে মেটেনি, শনিবারের এই পৃথক বৈঠকই তার প্রমাণ।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কী হবে তা ঠিক করতে শনিবার মালঞ্চ-র শহর তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডাকেন সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী। ওই দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতিরাও। এর আগে স্থানীয় হিতকারিণী হাইস্কুলেও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিএমসি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ শিক্ষক সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন দেবাশিসবাবু। এ দিনের বৈঠকে দেবাশিসবাবু বলেন, “ভারতবর্ষে ফেডারাল ফ্রন্টের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যেই আমরা দলীয় কর্মী ও শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে প্রচার শুরু করতে বলেছি। প্রার্থীকে দ্রুত এনে সভা মিছিলের আয়োজন করা হবে।”

Advertisement

অন্য দিকে এ দিনই শহরের ডেভেলপমেন্টে একটি দলীয় কার্যালয়ে জহরলাল পালের নেতৃত্বে মহিলা তৃণমূল সদস্যদের নিয়ে নারী দিবস পালনের অনুষ্ঠান করা হয়। এর পর প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের সমর্থন প্রচার শুরু করা ডাক দেওয়া হয়। ওই কর্মসূচিতে এ দিন দেখা গিয়েছে জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, কোর কমিটির সদস্য সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে দলে আসা হেমা চৌবেকে। এ দিন জহরলাল পাল বলেন, “এই শহরে তৃণমূল দলটা শুরু করেছিলাম আমি। তাই দলের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা তা অন্য কারও রয়েছে কি না জানি না। সেজন্য কর্মীদের প্রচার শুরু করতে বলেছি। এখানে ৪০ হাজার ভোটে আমরা জিতব।” এ দিন দেবাশিস চৌধুরীর কর্মীসভা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জহরলালবাবু বলেন, “কে কোথায় সভা করেছে জানি না। দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে জেলা নেতা হিসেবে আমি কর্মীদের প্রচারে নামতে বলেছি।”

প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী রেলশহরে আলাদা হয়ে প্রচার হবে?

জবাবে শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর জবাব, “বিষয়টি একসাথে বা আলাদা হয়ে প্রচার নয়। কারণ প্রার্থী একজনই। তাই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে যে যেভাবে খুশি প্রচার করতেই পারেন।” উল্লেখ্য খড়্গপুর শহরে কংগ্রেস ও সিপিআইয়ের প্রভাব রয়েছে। তাই দুই শিবিরের এই আলাদা প্রচার মানুষ কিভাবে মেনে নেবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা নিয়েও। যদিও জেলা তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের দাবি, “আমি দু’টি কর্মসূচিতেই যোগ দিয়েছিলাম। আসলে দক্ষিণপন্থী দলে মত পার্থক্য থাকেই। যদি আলাদা করেও প্রচার চলে তবে সেটিও দলের প্রার্থীর স্বার্থেই হবে। তাই অন্তর্ঘাতের প্রশ্নই নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement