অসুস্থ চম্পা বাই। —নিজস্ব চিত্র।
পোস্ট অফিসের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন রেলশহরের এক বৃদ্ধা।
বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন খড়্গপুর ছোট ট্যাংরার বাসিন্দা চম্পা বাই। তারপর ছ’মাস ধরে দেহের অর্ধেক অংশ অসাড়। বাড়িতেই শয্যাশায়ী চুরাশি বছরের ওই বৃদ্ধা। তাঁর স্বামী রঙ্গনাথ সাব-ডিভিশনাল পোস্ট অফিসের পেনশন গ্রাহক ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে চম্পাদেবীই ওই পোস্ট অফিসে পেনশন তোলেন। অসুস্থতার জন্য প্রথম দিকে পোস্ট মাস্টারের সহযোগিতায় বাড়িতে পেনশনের টাকা পৌঁছে দেওয়া হলেও গত তিন মাস তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চম্পাদেবীর। বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে পোস্ট অফিসে এসে টাকা নিতে হচ্ছে তাঁকে।
বছর চারেক চম্পাদেবীর স্বামী রেলকর্মী রঙ্গনাথ মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর পেনশন বাবদ মাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পান তিনি। গত বছর অগস্টে বাড়িতেই পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান চম্পাদেবী। প্রথমে খড়্গপুর রেল হাসপাতাল ও পরে গার্ডেনরিচে রেলের হাসপাতালে তাঁর চিকিসা হয়। সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িতেই শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর সঙ্গে থাকেন অবিবাহিত ছেলে আনন্দ ভর্মা। দেখভালের জন্য রয়েছেন একজন পরিচারিকাও।
চম্পাদেবী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় তাঁর ছেলে আনন্দবাবু যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করেন। তখন সাড়াও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। একবার হাসপাতালে ও একবার পিওনের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন পোস্ট অফিস কতৃর্পক্ষ। কিন্তু অভিযোগ, জানুয়ারি মাসে ফের যোগাযোগ করলে চম্পাদেবীকে সশরীরে পোস্ট অফিসে এসে টাকা নিতে বলা হয়। তার পর থেকে মাকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে এসে টাকা তুলেছেন আনন্দবাবু। আর ঠা-ঠা রোদে পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্সে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকতে হচ্ছে চম্পাদেবীকে। গত কয়েক মাসে এই দৃশ্য দেখেছেন অন্য গ্রাহকরাও। এ দিন পেনশন নিতে আসা এক গ্রাহক বলেন, “প্রতি মাসেই ওঁকে দেখছি। অনেকে আবার কষ্ট করে রিকশায় চেপে পোস্ট অফিসে আসছেন।”
নিয়ম অনুযায়ী, একজন পেনশনভোগীকে প্রতি বছর নভেম্বরে জীবিত থাকার শংসাপত্র (লাইফ সার্টিফিকেট) সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসে জমা দিতে হয়। পেনশনভোগী মারা গেলে যাতে অন্য কেউ তাঁর হয়ে টাকা তুলে নিতে না পারেন, সে জন্যই এই বিধি। তবে পেনশনভোগী অসুস্থ থাকলে তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ প্রাধিকার বলে (অথরিটি) পেনশন তুলতে পারেন। প্রয়োজনে পোস্ট অফিসের তরফে জনসংযোগে নিযুক্ত কর্মী পেনশনভোগীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে পরিজনদের হাতে টাকা তুলে দেন। সে ক্ষেত্রে অসুস্থ পেনশনভোগীর পরিবারের লোকেদের চিকিৎসকের দেওয়া শংসাপত্র-সহ আবেদন করতে হয়।
চম্পাদেবীর ক্ষেত্রে কেন এই নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না?
বৃদ্ধার ছেলে আনন্দ বর্মার দাবি, “আমরা প্রথমে চিকিৎসকের শংসাপত্র দিয়েই পিওনের মাধ্যমে টাকা পেয়েছিলাম। জানুয়ারি মাসে যখন মাকে আসতে বলা হল তখনও লিখিত আবেদন দিতে চেয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মী তা মানতে চাননি।” সাব-ডিভিশনাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার অভিজিৎ সাঁই অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ওই পেনশন গ্রাহক আমাদের উপযুক্ত প্রমাণ-সহ লিখিত আবেদন করেন তবে নিশ্চয়ই দেখব।”