অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী-সহায়িকা নিয়োগ

পদ ১২৬, আবেদন পড়ল সাড়ে ১১ হাজার

পদ ১২৬টি। আর তার জন্য আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে এগারো হাজার। ন্যূনতম যোগ্যতা যেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, সেখানে বহু স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণও আবেদন করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ছবিই সামনে এসেছে। সম্প্রতি মেদিনীপুর (সদর) মহকুমার একটি পুর-এলাকা এবং ছ’টি ব্লকের ক্ষেত্রে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয়।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৭
Share:

পদ ১২৬টি। আর তার জন্য আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে এগারো হাজার। ন্যূনতম যোগ্যতা যেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, সেখানে বহু স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণও আবেদন করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ছবিই সামনে এসেছে।

Advertisement

সম্প্রতি মেদিনীপুর (সদর) মহকুমার একটি পুর-এলাকা এবং ছ’টি ব্লকের ক্ষেত্রে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয়। জানানো হয়, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলে কর্মী পদে আবেদন করা যাবে। মাসিক ভাতা মিলবে ৪,৩৫০ টাকা। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ হলে সহায়িকা পদে আবেদন করা যাবে। মাসিক ভাতা ২,৮৫০ টাকা। সহায়িকার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হতে হবে। কর্মীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বাসিন্দা হতে হবে। বুধবারই ছিল আবেদনের শেষ দিন। জানা গিয়েছে, ১২৬টি পদের জন্য সব মিলিয়ে আবেদন জমা পড়েছে ১১,৫৭১টি।

এই পরিসংখ্যান তৃণমূলের আমলে কর্মসংস্থানের বেহাল ছবিই তুলে ধরছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ কোথায়? আগে ভিন্ রাজ্য থেকে চাকরি করতে অনেকে পশ্চিমবাংলায় আসতেন। ছবিটা এখন পুরোপুরি উল্টো।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “বহু চালু কলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। নতুন কারখানাও হচ্ছে না। ফলে, নতুন করে কাজের সুযোগ তৈরি হবে কী ভাবে?” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বহু কলকারখানাই বন্ধ। বড় মাপের কারখানা না খোলায় নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি হচ্ছে না। এই ব্যর্থতা রাজ্য সরকারের। তার উপর তৃণমূল নেতাদের হাত ধরে সিন্ডিকেট, তোলাবাজিও চলছে।” তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “কে বলছেন নতুন চাকরি হচ্ছে না? রাজ্য আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছে। তাও উন্নয়ন- কর্মসংস্থান হচ্ছে। গত তিন বছরে অনেকে কাজ পেয়েছেন। একশো দিনের প্রকল্পেই তো প্রচুর মানুষ কাজ পেয়েছেন!”

Advertisement

শাসক দলের নেতারা যা-ই দাবি করুন না কেন, জেলায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আদৌ আশাপ্রদ নয়। বড় আকারে সরকারি নিয়োগ হয় না বললেই চলে। তার উপর জিন্দলদের যে ইস্পাত প্রকল্প কাজের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, সম্প্রতি তা-ও স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়িতে চাকরির জন্যও জেলার বহু স্নাতক, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ যুবক-যুবতী আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “জানতাম অনেকে আবেদন করবেন। তবে এত সংখ্যক আবেদন জমা পড়বে, ভাবতে পারিনি!” তিনি আরও জানান, মহিলা আবেদনপ্রার্থীর সংখ্যাই বেশি।

গত মার্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। রাজ্যে ৩৫ হাজার পদের জন্য আবেদন করেছিলেন ৪৫ লক্ষ চাকুরিপ্রার্থী। পরে অবশ্য এই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। গত বছরও মার্চে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা হয়েছিল। ৩০ হাজার পদের জন্য আবেদন করেছিলেন ১৮ লক্ষ চাকুরিপ্রার্থী। অর্থাৎ, পদপিছু ৬০ জন আবেদন করেছিলেন। টেটে সাফল্যের হার অবশ্য ছিল ১ শতাংশেরও কম। প্রাথমিকের টেটে যেখানে পদপিছু ৬০ জন আবেদন করেছিলেন, সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী- সহায়িকা নিয়োগের ক্ষেত্রে পদপিছু আবেদন করেছেন ৯২ জন!

একদিনে এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার কোনও অভিজ্ঞতা মহকুমা প্রশাসনের নেই। শুধু কী পরীক্ষা নেওয়া? এত সংখ্যক আবেদন নথিভুক্ত করার পরিকাঠামোও মহকুমা প্রশাসনের ছিল না। পরিস্থিতি দেখে নতুন করে কম্পিউটার আনিয়ে ডাটা- এন্ট্রির কাজ শুরু করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে ছ’টি কম্পিউটারে ডাটা- এন্ট্রির কাজ চলছে। এ কাজের জন্য কয়েকজন কর্মীকেও ব্লক থেকে সদরে আনতে হয়েছে। বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, রাজ্যের আর্থিক কর্মকাণ্ড সঙ্কুচিত হওয়ায় চাকরির সুযোগ কমছে। এর উপর রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা সমস্যার জেরে তৈরি হওয়া অস্থিরতা লগ্নিকারীদের মনে নতুন আশঙ্কা তৈরি করছে। শিক্ষা শেষে চাকরির সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতাও তাই বাড়ছে। কর্মসংস্থানের হিসেবে অসম, সিকিম, গুজরাতের মতো রাজ্য যেখানে এগিয়ে চলেছে, সেখানে পিছিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। বিপুল সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করেছেন। তবে কর্মী- সহায়িকা নিয়োগের পরীক্ষা কবে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে আগে লিখিত পরীক্ষা হবে। তারপর মৌখিক পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা সফল হবেন, তাঁরাই মৌখিক পরীক্ষায় ডাক পাবেন। কেন এখনও লিখিত পরীক্ষার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হল না? সদুত্তর এড়িয়ে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “শীঘ্রই লিখিত পরীক্ষার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, “একদিনে একটি মহকুমায় এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার কোনও অভিজ্ঞতা সত্যিই আমাদের নেই। হয়তো একটি স্কুলে সমস্ত পরীক্ষার্থীকে বসানো যাবে না, সেই ক্ষেত্রে দু’- তিনটি স্কুলে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার আগে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা জরুরি। এখন আবেদনপ্রার্থীদের সমস্ত তথ্য কম্পিউটারে নথিভুক্তকরণের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলেই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পরীক্ষার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন