নারায়ণগড়ে অভিযুক্ত তৃণমূল

পরাজিত সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলা

ভোটের ফল প্রকাশের পর পরাজিত সিপিএম প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে নারায়ণগড়ের খুরশি পঞ্চায়েতের গোপীনাথপুরের ঘটনা। পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনে গোপীনাথপুর আসনে পরাজিত হন সিপিএম প্রার্থী নারায়ণ পাতর। বামেদের থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী বাম প্রার্থী পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২৮
Share:

ভাঙচুরের পরে নারায়ণ পাতরের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

ভোটের ফল প্রকাশের পর পরাজিত সিপিএম প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে নারায়ণগড়ের খুরশি পঞ্চায়েতের গোপীনাথপুরের ঘটনা। পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনে গোপীনাথপুর আসনে পরাজিত হন সিপিএম প্রার্থী নারায়ণ পাতর। বামেদের থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী বাম প্রার্থী পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। সিপিএমের অভিযোগ, বুধবার রাতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় নারায়ণবাবুর বাড়িতে। দুষ্কৃতীরা তাঁর দোকানে ভাঙচুর চালায়। বাড়িতে ঢুকেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, সিপিএমের লোকেরাই স্থানীয় তৃণমূল নেতা মাধব মান্নার উপর হামলা চালায়। তার জেরেই এলাকায় অশান্তি ছড়ায়। ঘটনায় বৃহস্পতিবার সিপিএমের পক্ষ থেকে নারায়ণগড় থানায় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, মাধব মান্না, গোবিন্দ ভঞ্জ-সহ প্রায় ২৬ জন তৃণমূল কর্মীর নামে নারায়ণবাবুর বাড়ি ও দোকানে ভাঙচুর এবং তাঁর বাড়ির মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্ত শুরু হলেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

বুধবার পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়। গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে পঞ্চায়েত উপ-নির্বাচনে গোপীনাথপুর আসনে ১২৫টি ভোটে এগিয়ে রয়েছে বামেরা। যদিও আসনটি বামেদের হাতছাড়া হয়। বাড়ির সামনেই নারায়ণবাবুর চায়ের দোকান। অভিযোগ, এ দিন সন্ধ্যায় বাড়ি সংলগ্ন চায়ের দোকানে মাধববাবুর সঙ্গে বচসা বাধে নারায়ণবাবুর। তৃণমূলের লোকেরা চায়ের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। তার কিছুক্ষণ পরেই রাতে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা নারায়ণবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়। নারায়ণবাবুর দোকানে ও বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় দোকানের দরজা, অ্যাসবেস্টস। সেই সময় রাতের খাবার খাচ্ছিলেন নারায়ণবাবুর স্ত্রী ও মেয়ে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা নারায়ণবাবুর স্ত্রী ও মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করে বলে অভিযোগ। ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় ভাতের থালাও। ঘটনার খবর পেয়ে পরাকাল্লা, বালিচাত্রী, খুরশি থেকে গোপীনাথপুরে সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালায় হামলাকারীরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নারায়ণগড়ে কুনারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচটি ও খুরশি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে উপ-নির্বাচন হয়। ভোট হয় কুনারপুরের নন্দকিশোরপুর পঞ্চায়েত সমিতির আসনেও। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই সবক’টি আসনই বামেদের দখলে যায়। যদিও ভোটের কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচিত বাম প্রার্থীরা একে একে পদত্যাগ করায় আসনগুলি শূন্য হয়। যদিও উপ-নির্বাচনে এই সবক’টি আসনই বামেদের থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। গোপীনাথপুর আসনে সিপিএম প্রার্থী ৮১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৫৮৫টি। সিপিএম প্রার্তী ভোট পেয়েছে ৫০৪ট়ি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণবাবুর বাড়িতে যান সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মদন বসু, দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর দত্ত। এ দিন মদন বসু বলেন, “এখানে তৃণমূল নিজেদের মতো ভোট করতে পারেনি। লোকসভার তুলনায় আমাদের ভোট বেড়েছে। এটাই আমাদের প্রার্থীর অপরাধ।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সূর্যকান্ত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এই ভাঙচুর ও মহিলাদের নিগ্রহ করা হয়েছে।”

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “দলের কর্মী মাধব মান্না নারায়ণ পাতরের বাড়ির সামনে দিয়ে ফিরছিলেন। সেই সময় সিপিএমের লোকেরা অতর্কিতে মাধবের উপর হামলা চালায়।’’ মিহিরবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘দুরিয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুনীতা পালের বাড়িতে চড়াও হয় সিপিএমের লোকেরা। সেই কারণেই গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নারায়ণ পাতরের বাড়িতে সামান্য ভাঙচুর করেছে বলে শুনেছি। এরপরেও আমি কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন