মশাল, পটকা দিয়ে চলছে হাতি খেদানো।—নিজস্ব চিত্র।
‘ফলচোর’দের তাড়ানোর কাজে কাজে হার মেনেছে বন দফতর। তাই এবার চোর তাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হল গ্রামবাসীদের। গত একমাস ধরে বিকেল না হতে হতেই হাজির হয়ে যাচ্ছে চোর-হাতিরা। এ হেন হাফ ডজন চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ঝাড়গ্রামের গড় শালবনি, কয়মা, শিরষি, জিতুশোল, ঘৃতখামের মত স্থানীয় আট ন’টি গ্রামের বাসিন্দারা। তবে বিশাল বপুর চোরেরা সবচেয়ে বেশি হামলা চালাচ্ছে গড় শালবনি এলাকায়। এ চোর সে চোর নয়। এই চোরের আদি নিবাস ঝাড়খণ্ডের দলমায়। তবে ওরা কেউ বছরখানেক কেউ বা তারও বেশি, দলছুট হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে থেকে গিয়েছে। বন দফতরের কথায়, ছ’টি ‘রেসিডেন্সিয়াল হাতি’ বিকল্প খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলেছে। মাঠে এখন ফসল নেই। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত প্রচণ্ড দাবদাহে সবুজ লতাগুল্মও শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই বিকল্প খাবারের খোঁজেই মাস খানেক ধরে হাতিগুলি গৃহস্থ বাড়ির পাকা আম, কাঠাঁল, ও লিচু সাবাড় করে দিচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার একটি পেট্রল ও মুরগি খামারের পাঁচিল একাধিক বার ভেঙে ভেতরে ঢুকে প্রাঙ্গণের ফল গাছ তছনছ করে পাকা আম ও কাঁঠাল সাবাড় করে দিয়েছিল হাতিরা।
বেশ কয়েকবার হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিল বন দফতর। কিন্তু খেদিয়ে দিলেও হাতিগুলি বাধা না মেনে ফিরে আসছে বারবার। দিনের ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালানোর মত পর্যাপ্ত বনকর্মী বা পরিকাঠামো বন দফতরের নেই। তাই গ্রামবাসীদের হাতি তাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের সংযুক্ত আধিকারিক হরি কৃষ্ণাণ ও মানিকপাড়ার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথের নেতৃত্বে বনকর্মীরা হাতিগুলোকে চার-পাঁচ কিলোমিটার তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফের হাতিগুলি এলাকায় চলে এসেছে। বিজনকুমার বলেন, “হাতি তাড়ানোর জন্য ২০ জন গ্রামবাসীকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও প্রয়োজনীয় হাতি তাড়ানোর পটকা ও মশাল জ্বালানোর জন্য পোড়া মোবিল দেওয়া হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “হাতিগুলিকে কিছুতেই তাড়ানো যাচ্ছে না। বনকর্মীদের তদারকিতে হাতিগুলিকে তাড়াতে গ্রামবাসীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে তিনটি হাতি এলাকায় এসেছিল। পরে পাকা ফলের লোভে আরও তিনটি হাতি গড় শালবনির জঙ্গলে আসে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছে, পালের একটি হাতির পায়ে পুরোনো ক্ষত ছিল। মাস খানেক ধরে ফল খেয়ে হাতিটি এখন পুরো সুস্থ। ওই হাতিগুলির মধ্যে গাট্টাগোট্টা একটি বিশাল হাতি রয়েছে। গ্রামবাসীরা দাঁতহীন ওই পুরুষ হাতিটার নাম দিয়েছে ‘চায়না’। চায়নার নেতৃত্বে হাতিগুলি দুপুর হলেই গড় শালবনির জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামের দূরে বটতলায় হাজির হচ্ছে। সুযোগ বুঝে যখন তখন হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। গত একমাস ধরে হাতির উত্পাতে ঘুম উড়ে গিয়েছে গ্রামবাসীদের। তবে এলাকায় এখন দলমার হাতি নেই। তাই রক্ষে! নইলে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা পানু মাহাতো, তপন মাহাতোরা বলেন, “হাতি তাড়ানোর জন্য বন দফতর দিনে ২৫০ টাকা দেবে বলেছে। সঙ্গে প্রয়োজনীয় পটকা ও মশালের জ্বালানি। তবে হাতিগুলিকে স্থায়ীভাবে কতটা তাড়ানো যাবে তা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। দিন দিন হাতির সংখ্যা বাড়ছে। আরও তিনটি দলমার দলছুট হাতি চলে এসেছে।”