ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে সন্ত্রাসের অভিযোগ নতুন নয়। যত দিন এগিয়ে আসছে ততই শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আরও বেশি করে তুলছে বিরোধীরা। তারই জেরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বৃহস্পতিবার এক বৈঠক হল কালেক্টরেটের সভাকক্ষে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পর্যবেক্ষক, রিটার্নিং অফিসার, প্রার্থী বা তাঁদের প্রতিনিধি। বৈঠকেও সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। সিপিআইয়ের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ তোলা হয়। তারপরই কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোন বুথে কী ধরনের আশঙ্কা করছে কোন রাজনৈতিক দল, তার কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট বুথগুলির তালিকা তৈরি করে দিতে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। সেই মতো আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে স্পর্শকাতর কেশপুর। রাজনৈতিক সংঘর্ষের সূত্রে বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা। কংগ্রেসের অভিযোগ, বাম আমলেও কেশপুর অবরুদ্ধ ছিল, বর্তমানেও অবরুদ্ধ। মানসবাবুর কথায়, “আগে সিপিএম কেশপুরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এখন সেই একই পথে চলছে তৃণমূল।” ঘাটালের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার অভিযোগ, “এক সময় পাঁশকুড়া লাইন এসেছিল। এখনও সেই লাইনেই চলতে চাইছে শাসক দল।” যদিও সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “আমরা সন্ত্রাসের বিরোধী। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে তলার পক্ষে। তবু অকারণ কুৎসা রটাতে বিরোধীরা অভিযোগ করছে।”
ঘাটালে ভোট ১২ মে, একেবারে শেষ দফায়। বিরোধীদের আশঙ্কা, আশপাশের জেলায় ভোট-পর্ব মিটে যাওয়ায় শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তখন ঘাটালে ঢুকে পড়বে। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রটি হুগলি, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর সীমানা এলাকায় অবস্থিত। আর ওই তিন জেলায় আগেই ভোট হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শাসক তৃণমূল যাতে ঘাটালে অশান্তি ছড়াতে না পারে, মানুষ নির্ভয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন কমিশনকে তার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। মানসবাবুর অভিযোগ, “কেশপুর, দাসপুর, ডেবরা, পাঁশকুড়া-সহ সর্বত্রই সন্ত্রাসের পরিস্থিতি। কিন্তু এখনও কোনও আধাসামরিক বাহিনীর দেখা মেলেনি। আমি দাবি জানিয়েছি, সব বুথকেই সংবেদনশীল ও বেশিরভাগ বুথকেই অতি স্পর্শকাতর চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আধা সামরিক বাহিনী দিতে হবে। নতুবা দেখা যাবে, অন্য জেলার মতো হয়ে গিয়েছে। অবাধ বুথ দখল, ছাপ্পা হবে, আর কমিশনকে পাওয়া যাবে না, দেখা মিলবে না আধা সামরিক বাহিনীকেও।”
কংগ্রেসের অভিযোগ, কেশপুরে রাজনৈতিক খুন, বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, লুঠপাট-সহ ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। রাজ্যে সরকার বদলের পরে কেশপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বারবার ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। গোষ্ঠী কোন্দল সামলাতে একাধিকবার ব্লক সভাপতিও বদলাতে হয়েছে তৃণমূলকে। মানসবাবুর কথায়, “এরপরেও কেশপুরের প্রতিটি বুথ অতি সংবেদনশীল হবে না! প্রতিটি বুথে আধা সামরিক বাহিনী থাকবে না, আধা সামরিক বাহিনীর টহল থাকবে না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কী করে?” তারপরই পর্যবেক্ষকেরা জানিয়ে দেন, কোন বুথ কী কারণ স্পর্শকাতর বলে তাঁদের মনে হচ্ছে, সেখানে কী ধরনের গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন, কেন করছেন, বিবরণ-সহ তা জানাতে হবে। তারপরই কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।