সোমবারের বৃষ্টির পর জল জমে রয়েছে আলু খেতে। ছবি: নিজস্ব চিত্র।
ফের আলু চাষে আশঙ্কার ভ্রূকুটি!
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় চলতি বছরে প্রথম থেকেই ব্যাহত হচ্ছে আলুর চাষ। মেঘলা আবহাওয়ায় আলুর নাবি ধসা রোগের প্রকোপ বাড়ছিল। গত তিন দিন ধরে মেঘলা আবহাওয়া ও সোমবার অকাল বৃষ্টিতে আলুর খেতে জল জমে যাওয়ায় কার্যত দিশেহারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আলু চাষিরা। উদ্বেগে কৃষি দফতরও।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে চলতি মরসুমে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। তবে এখনও হাতে সময় রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “আলুতে ধসা রোগের প্রকোপ ক্রমশ বেড়েই চলছে। এখনও পর্যন্ত জেলার প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমিতে ধসা রোগ দেখা দিয়েছে। তারপর বৃষ্টির দরুন খেতে জল জমে যাওয়ায় আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে গেলে চাষিদের চিন্তার কিছু নেই।”
স্থানীয় ও কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ক’দিন ধরেই আবহাওয়া মেঘলা। রোদের দেখা নেই। তাতে সমস্যা বাড়ছিলই। সোমবার দুপুর থেকে জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে চাষিদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়ে। জেলার গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা, শালবনি, দাসপুর ব্লকে বেশি আলু চাষ হয়। সোমবারের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় আলুর খেতে জল জমে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আলু চাষে যে সেচের একদম প্রয়োজন নেই, তা নয়। তবে জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল জমে থাকলে আলু গাছ তা সহ্য করতে পারে না। জমি থেকে দ্রুত জল সরিয়ে না দিলে গাছের গোড়ায় জল জমে পচন শুরু হবে। গাছের ক্ষতি হলে তার প্রভাব পড়বে উৎপাদনেও।
মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার অনেক চাষি জমি থেকে জল বের করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। অনেকে নিকাশি সমস্যার কারণে জমি থেকে জল বের করতে পারেননি। তবে এ দিনও জেলার সর্বত্র রোদের দেখা মেলেনি। রোদ উঠলে সমস্যা অনেকটা মিটে যেত। আলু গাছ ও মাটির ভিতরে আলুর বৃদ্ধির এখনই উপযুক্ত সময়। তবে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। স্যাঁতস্যাতে আবহাওয়ায় ধসা রোগ ছড়ানোর জন্য অনুকূল। গড়বেতার ময়রাকাটার আলু চাষি বিমল কান্ডার, চন্দ্রকোনার মনোহরপুরের অলোক সাঁতরারা বলেন, “জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। কিছু জমি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব জমি থেকে জল বের করা সম্ভব হয়নি। রোদও না ওঠায় সমস্যা কাটেনি। শেষ পর্যন্ত ঘরে আলু তুলতে পারব কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে।’’
কৃষি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (শস্য সুরক্ষা) শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “ধসা নিয়ন্ত্রণে জোর কদমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ফলন কিছুটা বাড়াতে হলে এ ছাড়া দ্বিতীয় কোনও পথ নেই।” শালবনির চাষি প্রলয় কারকের কথায়, “প্রথমে অনেকটা জমিতেই ধসা লেগেছিল। তবে ওষুধ ব্যবহার করায় কিছুটা কমেছে। তবু আতঙ্কে রয়েছি। আবার কখন ছড়িয়ে পড়ে।” কৃষি দফতর জানিয়েছে, নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার না করলে ধসা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শুভেন্দুবাবুর কথায়, “এ জন্য আমরাও নজরদারি চালাচ্ছি। সমস্যা হলে চাষিদেরও বলা হয়েছে, তাঁরা যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।”
কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলুতে ধসা রোগের প্রভাব দেখা দিয়েছে। ক্রমে বাড়ছে ধসার প্রকোপ। কৃষি আধিকারিকদের মতে, যদি আরও ১০-১৫ দিন শীত থাকে আর ধসা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে অবশ্য উৎপাদনে খুব হেরফের হবে না। আলুর গাছ দেখে বোঝার উপায় নেই যে চাষ খারাপ হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন শেষে হয়তো দেখা যাবে ফলন কম হয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, গত বছর আলুর ফলন ভাল হলেও লোকসানের মুখে পড়েছিলেন চাষিরা। গত বার জেলার প্রায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এ বার জেলার ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যদিও বৃষ্টির জন্য আলুর ক্ষতির বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য আসেনি বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তার দুলালবাবুর পরামর্শ, “জমিকে আগাছ মুক্ত রাখুন। নিয়মিত জমি থেকে জল বের করে দিন। ধসার ক্ষেত্রে রোগগ্রস্ত গাছ দেখলেই জমি থেকে তুলে তা নষ্ট করে দিন।”