লালগড়ে আসছেন না মুখ্যমন্ত্রী

বহু টাকা জলে, খোলা হচ্ছে মঞ্চ

শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফর থেকে বাদ পড়ল লালগড়।খবর শোনার পরে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের মাথায় হাত। হতাশ এলাকাবাসী। বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা বাতিল হওয়ায় মুখ পুড়েছে শাসক দলের।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

কাল, বৃহস্পতিবার নয়াগ্রামে প্রশাসনিক সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।চলছে তারই প্রস্তুতি।লালগড়-আমকলা। ছবি : দেবরাজ ঘোষ

শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফর থেকে বাদ পড়ল লালগড়।

Advertisement

খবর শোনার পরে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের মাথায় হাত। হতাশ এলাকাবাসী। বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা বাতিল হওয়ায় মুখ পুড়েছে শাসক দলের। অন্য দিকে, লালগড়ে সভার প্রস্তুতির জন্যই এই ক’টা দিনে খরচ হয়ে গিয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বৃহস্পতিবার বিকেলে লালগড়ের সজীব সঙ্ঘের মাঠের সভাস্থল থেকে লালগড় সেতুর উদ্বোধন করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু গত সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিকেলে আকাশপথে কপ্টার উড়ানের সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে লালগড়ের সভা বাতিল করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে সজীব সঙ্ঘের মাঠে গিয়ে দেখা গেল, পূর্ত দফতরের কয়েকজন কর্মী সভামঞ্চের বাঁশ-কাপড় খুলে ফেলার কাজ তদারকি করছেন। প্রায় ৮৭ হাজার বর্গফুট সভাস্থলের পুরোটা নতুন নীল-সাদা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সভামঞ্চটি হয়েছে দেড় হাজার বর্গফুটের। মঞ্চের পিছনে লাগোয়া এক হাজার বর্গফুটের অ্যান্টি চেম্বার। সভাস্থলের দু’পাশে সরকারি বিভিন্ন দফতরের জন্য ৩৬টি স্টল ও নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

গোটা সভাস্থলে লাগানো কয়েকশো মেটাল লাইট ও সিলিং ফ্যান। সে সব খুলে নিচ্ছিলেন ঠিকাদারের কর্মীরা। পূর্ত দফতরের এক কর্মী জানালেন, কলকাতার এক ঠিকাদারকে মঞ্চ ও সভাস্থল তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থল ওই ঠিকাদারই তৈরি করেন। এখনও পর্যন্ত ৬০ লক্ষের কাছাকাছি খরচ হয়ে গিয়েছে। পুরো প্রকল্পটির বাজেট ছিল ৮০ লক্ষ টাকা। পূর্ত দফতরের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, আকাশপথে লালগড়ে আসার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। থানার পাশে ও কলেজের কাছে দু’টি হেলিপ্যাড ও সংলগ্ন ব্যারিকেড তৈরির জন্য আরও ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে।


সেতু ঘুরে দেখছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খরচের খতিয়ান শুনে চোখ কপালে উঠছে বাসিন্দাদের। লালগড়ের হোটেল কর্মী রামেশ্বর লোহার বলেন, “এমন চোখ ধাঁধানো সভাস্থল জীবনে দেখিনি। মুখ্যমন্ত্রী এলে লোকসমাগম হতো। বিক্রিবাটা বাড়ত। সেটাও হল না।” নেতাই গ্রামের হংসধ্বজ রায়ের কথায়, “দিদি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে লালগড়ে সভা করেছেন। কিন্তু নেতাইয়ে একবারও আসেননি। তাও আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সেতুর উদ্বোধন করতে দিদি আসবেন না শুনে সকলেই ভেঙে পড়েছেন।”

এ দিন সভাস্থল তৈরির বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারের কর্মী প্রবীর নস্কর, পবন সামন্তরা জানালেন, সভাস্থলটি তৈরির জন্য ১৫৪ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে নাগাড়ে কাজ করে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। এখন তা খোলার নির্দেশ হয়েছে। পূর্ত দফতরের লোকজন জানালেন, মঞ্চ ও সভাস্থল খুলতে আরও দিন পাঁচেক সময় লাগবে।

এ দিন সকালে লালগড় সেতুটি পরিদর্শনে এসেছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গী ছিলেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ প্রমুখ। মুখ্যমন্ত্রীর সভা বাতিলের প্রসঙ্গে সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিন তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের কাছে কর্মীরা জানতে চান, ‘এত বিপুল রাজসূয়ের আয়োজন করেও যজ্ঞ তো হল না! মানুষের কাছে কী জবাব দেবেন?’ বনবিহারীবাবু বলেন, “কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির খবর হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর কানে গিয়েছে। সভা বাতিলের কারণ সঠিক এখনও জানতে পারিনি। সভায় ষাট হাজার লোক জমায়েতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সব জলে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন