ভোটের হলদিয়ায় ফের সরব বন্দরের জমিদাতারা

ভোট আসে, ভোট যায়। কথা রাখে না কেউ। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে আবারও পুনর্বাসন ও চাকরির দাবিতে সরব হয়েছে হলদিয়া বন্দরের জন্য জমিদাতাদের সংগঠন ‘হলদিয়া উদ্বাস্তু কল্যাণ সমিতি’।

Advertisement

অমিত কর মহাপাত্র

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৮
Share:

ভোট আসে, ভোট যায়। কথা রাখে না কেউ। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে আবারও পুনর্বাসন ও চাকরির দাবিতে সরব হয়েছে হলদিয়া বন্দরের জন্য জমিদাতাদের সংগঠন ‘হলদিয়া উদ্বাস্তু কল্যাণ সমিতি’। শুরু হয়েছে লিফলেট বিলি ও পোস্টার সাঁটানোর কাজ। তাদের দাবি মানার ব্যবস্থা না করলে লাগাতার অনশন বা ভোট বয়কটেরও হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে সমিতি।

Advertisement

১৯৬২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত হলদিয়া হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার পর্বে ৬৮টি মৌজার প্রায় সাড়ে আট হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাম আমলের গোড়ায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, বন্দরের প্রতিটি উদ্বাস্তু ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য জমি এবং প্রত্যেক পরিবারের একজনকে বন্দরে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। তারপর প্রায় ৪০ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রূপায়িত হয়নি। অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবার ভোটের আগে আশ্বাস দেয়। কিন্তু কথা রাখে না। ২০০৯ সালে গঠিত ‘হলদিয়া উদ্বাস্তু কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক রাজকুমার দলপতি বলেন, “সব দলকে নানা সময়ে ভোট দিয়েও যেখানে লাভ হল না, সেখানে ভোট দিয়ে লাভ কী!” সমিতির সভাপতি অলক ভৌমিকের আবার অভিযোগ, “নানা কারণ দেখিয়ে উদ্বাস্তুদের কাজ দেওয়া হয়নি। অথচ বন্দরের পদাধিকারী ও রাজনৈতিক নেতাদের মদতে বহিরাগতদের অনেকেই কাজ পেয়েছে।”

কেন জমিদাতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি?

Advertisement

বন্দর কর্তৃপক্ষ সরাসরি এ নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “বন্দরের আর্থিক সঙ্কটের জন্য গত ২০০০ সাল থেকে নতুন কোনও নিয়োগ হয়নি। বন্দরের আর্থিক হাল না ফেরা পর্যন্ত তা আর সম্ভবও নয়।” তমলুকের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী আবার এ জন্য কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন। শুভেন্দুবাবুর কথায়, “হলদিয়া বন্দর লাভজনক হলেও লাভের অঙ্ক কলকাতা বন্দরের লোকসানের ভর্তুকি দিতে খরচ করছে কলকাতা পোর্টট্রাস্ট। পৃথক হলদিয়া পোর্টট্রাস্ট গঠন করা সম্ভব হলে এবং শালুকখালিতে নতুন করে বন্দর হলে সকলকেই কাজ দেওয়া সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই আমি লড়াই করছি।”

বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া বন্দর হিসেবে কাজ শুরু করার পর স্থানীয় অনেকেই কাজ পেয়েছেন। তবে তার মধ্যে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নগণ্য। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র থেকে উদ্বাস্তুদের ৩৭২ জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩২১ জনের প্যানেল হয়েছিল। কিন্তু কাজ পান মাত্র ৯৮ জন। তাঁরা কাজ পান ১৯৯৯ সালে। ১৯৯৭ সালে ৭৫টি শূন্য পদের জন্য ৮০০ জনের নাম যায়। ১৯৯৮-৯৯ সালে ৭৫ জনের প্যানেল হয়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জন ওবিসি তালিকাভুক্ত হিসেবে কাজ পান। তারপর থেকে আর কোনও নিয়োগ হয়নি।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা চূড়ান্ত হতাশার মধ্যে রয়েছেন। দক্ষিণ বৈষ্ণবচকের ভীমচরণ মান্না বলেন, “জমিদাতা পরিবারের সদস্য হিসেবে ১৯৯৬ সালে ইন্টারভিউ দিয়ে প্যানেলভুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আজও চাকরি পাইনি।” তাঁর কথায়, “অন্যত্র ঠিকাকর্মী হিসেবে যে কাজ করতাম, তা আজ আর নেই। সংসার চলে না। প্রতিবার ভোটের আগে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।” ক্ষুদিরাম স্কোয়ারের রাজকুমার দলপতিও ১৯৯৮ সাল থেকে প্যানেলভুক্ত। তাঁরও বক্তব্য, “বন্দর দূর, কোনও শিল্পসংস্থায় পর্যন্ত কাজ দেওয়া হয়নি।” দেভোগ কলোনির কল্পনা আড়ি, গাঁধী কলোনির জয়শ্রী হালদার, স্বর্ণলতা মাইতিদের দাবি একটু আলাদা। তাঁদের বক্তব্য, “বন্দর আমাদের জমি দিয়েছে। আমাদের বন্দরেই স্থায়ী কাজ দিতে হবে।”

রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য এ বারও জমিদাতাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিচ্ছে। তমলুক লোকসভায় এ বারের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি বলেন, “আমাদের সময়ে (বাম আমলে) অনেকে যেমন কাজ পেয়েছেন, তেমনই অনেকে আবার পাননি। তাই আমি উদ্বাস্তু ওই মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দুবাবুরও প্রতিশ্রুতি, “বন্দর হোক বা শিল্পসংস্থা যেখানেই মানুষ জমি দিয়েছেন, সেই জমিদাতা ও উদ্বাস্তুরা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এলাকার মানুষ কেউই বেকার থাকবেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন