ভাসায় ডুলুং, সেতুর দাবি জামবনিতে

আশ্বাসই সার। চার বছরেও ডুলুং নদীর উপর সেতু পেল না চিল্কিগড়। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই দুঃশ্চিন্তা বাড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামবনি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

ডুলুংয়ের জল বাড়লে ডুবে যায় চিল্কিগড়ের কজওয়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

আশ্বাসই সার। চার বছরেও ডুলুং নদীর উপর সেতু পেল না চিল্কিগড়। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই দুঃশ্চিন্তা বাড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের বাসিন্দাদের। জলের তো়ড়ে পশ্চিম প্রান্তের ব্লক-সদর গিধনির সঙ্গে পূর্ব প্রান্তের জামবনি পুলিশ থানার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

Advertisement

জামবনি-গিধনি যাওয়ার রাস্তার মাঝে চিল্কিগড় এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে দৃশ্যত নিরীহ ডুলুং নদী। কিন্তু এক নাগাড়ে বৃষ্টি হলেই সে নদী ভয়ঙ্কর চেহারা নেয়। চিল্কিগড় কজওয়ের উপর জল উঠে গিয়ে তড়িত্‌ বেগে বইতে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েন দু’প্রান্তের প্রায় ৮৬টি গ্রামের বাসিন্দারা।

কজওয়েতে প্রবল বেগে জল বইতে শুরু করলে স্বভবতঃই বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। তুমুল স্রোতের মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে কজওয়েটি পেরোনোও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা নন। রবল সমস্যায় পড়েন পর্যটকরাও।

Advertisement

চিল্কিগড়ে কনক দুর্গার মন্দিরটি রয়েছে নদীর পূর্ব প্রান্তে। পশ্চিমে চিল্কিগড় রাজপ্রাসাদ। ফলে ঝাড়গ্রাম থেকে আসা পর্যটকরা মন্দির দেখার পরে আর রাজপ্রাসাদের দিকে যেতে পারেন না। আবার যাঁরা গিধনির দিক থেকে কনকদুর্গা দর্শনে আসেন, তাঁদের নিরাশ হয়েই ফিরেতে হয়।

ডুলুং-এর হড়পা বানে জল উঠে কজওয়েটি ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে গেলে পূর্বপ্রান্তের দুবড়া, জামবনি ও কেন্দডাংরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৬টি গ্রামের সঙ্গে পশ্চিমের ব্লক-সদর গিধনির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে চিল্কিগড় গ্রামে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন ওই ৩৬টি গ্রামের বাসিন্দারা। আবার পশ্চিম প্রান্তের চিল্কিগড়, ধড়সা, গিধনি, পড়িহাটি ও লালবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০টি গ্রামের সঙ্গে পূর্ব প্রান্তের জামবনি থানার যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বছর খানেক আগে লালবাঁধ গ্রামের আসন্ন প্রসবা এক বধূর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে রেফার করেছিলেন চিল্কিগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অঝোর বর্ষণের জেরে কজওয়েতে জল উঠে যায়। ওই মহিলাকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁর পরিজনেরা। ফলে, মৃত্যু হয় মহিলা ও তাঁর সন্তানের। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।

বানভাসি কজওয়ে পেরোতে গিয়ে হড়পা বানে একাধিক বার দুর্ঘটনাও ঘটেছে। গাড়ি ও ট্রাক্টর ভেসে গিয়ে চালক ও যাত্রীদের মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। তবু সেতু তৈরির উদ্যোগ নেই। চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর উপর সেতু তৈরির দাবিটি দীর্ঘদিনের। তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেতুর দাবিতে কজওয়ের সামনে অবরোধও করেছিলেন এলাকাবাসী। ওই সময় প্রশাসনিকস্তরে আশ্বাস মিলেছিল। পরে তত্‌কালীন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা সেতুর তৈরির জন্য পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সুকুমারবাবু এখন আর পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে নেই। ফলে, প্রকল্পটি বিশ বাঁও জলে।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখার উপর এবং লালগড়ে কংসাবতীর উপর সেতু তৈরি হচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও জামবনির ডুলুং নদীর উপর সেতু তৈরির ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগ ও দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। কারণ, কজওয়ে জলে অবরুদ্ধ হলে জরুরি প্রয়োজনে দু’প্রান্তের বাসিন্দাদের বিস্তর ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। কজওয়ের উপর উঁচু সেতু তৈরির জন্য পূর্ত দফতর সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে। সমীক্ষার রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে
পাঠানো হয়েছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “এখনও সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয় নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন