এই কাঠচড়া ময়দানেই কোনওমতে চলে অনুশীলন।
প্রতিদিন সকালে নদীর ধারে এক চিলতে ফাঁকা জায়গায় ব্যাট-বল নিয়ে খুদে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে ঘাটতি নেই। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে এই উঠতি খেলোয়াড়দেরই ছুটতে হয় রূপনারায়ণ নদীর ও পারে পাশের হাওড়ার নাউপালার মাঠে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই দস্তুর কোলাঘাটের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে। কারণ, শহরে খেলার মতো কোনও মাঠই নেই যে!
কোলাঘাট শহরের পুরাতন বাজারের কাছে রূপনারায়ণ নদীর তীরে যে ফাঁকা জায়গায় রোজ সকালে খুদেরা খেলাধুলো করে, তা শহরের বাসিন্দাদের কাছে কাঠচড়া ময়দান নামেই পরিচিত। কিন্তু নামেই ময়দান। আদতে সেটি রেল দফতরের পুরনো সাইডিং এলাকা। তারই মাঝে এক চিলতে জায়গায় পিচ তৈরি করে কোনওমতে চলে অনুশীলন। ১৯৮০ সাল নাগাদ এখানেই ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শুরু করেন কোলাঘাটের জনা কয়েক খেলাপাগল যুবক। তাঁদেরই চেষ্টার ফসল কাঠচড়া ক্রিকেট ক্লাব এইট্টি। এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়া প্রায় শ’খানেক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া। এখানেই এক সময় নিয়মিত অনুশীলন করতেন বর্তমানে বাংলা তথা ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য অশোক দিন্দা। কাঠচড়া ময়দানে দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষক কৌশিক ভুঁইয়ার অভিযোগ, “কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন বাড় বড়িশা এলাকায় বিশাল জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রেলের ওই জায়গায় স্থায়ী মাঠ করার জন্য ২০০১ থেকে বারবার রেল দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের মাঠটি শহরের একমাত্র মাঠ। কিন্তু আকারে ছোট ওই মাঠে অনুশীলন খেলা যায় না। ফলে যেতে হয় পাশের হাওড়া জেলার নাউপালার মাঠে।
শহরের একমাত্র কমিউনিটি হল।
একসময় কলকাতার ওয়াইএমসি ও তালতলা ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলা সুজন বেরা বর্তমানে কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। কোলাঘাটের এই বাসিন্দারও অভিযোগ, “আমাদের স্কুলে পাশে একটি মাঠ রয়েছে। সেটাই এই শহরের একমাত্র খেলার মাঠ। কিন্তু ওই মাঠে ৭ জনের দলের বেশী ফুটবল খেলা যায় না। মাঠটি দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার করা হয়নি। সম্প্রতি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী মাঠের উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকায় কাজ চলছে।” তিনিই জানান, ক্রিকেট ছাড়াও সাঁতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শহর থেকে উঠে এসেছেন অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এই শহরেরই সুপ্রিয় মণ্ডল ভারতীয় যুব অলিম্পিক সাঁতারু দলের সদস্য ছিলেন। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির স্বর্ণাভ দে কলকাতার ক্লাবে জুনিয়র ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছে। তাই সুজনবাবুর দাবি, খেলায় আগ্রহীদের জন্য কোলাঘাটে গড়ে তোলা হোক উপযুক্ত মাঠ। কোলাঘাট স্পোর্টস অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, “কোলাঘাটে খেলার মাঠের সমস্যা রয়েছে। শহরে একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির চেষ্টা করছি।”
খেলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এই শহরের। এক সময় কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুল সংলগ্ন আবগারি দফতরের ডিপোয় এক্সাইজ সাব-ইনস্পেক্টর হিসেবে ছিলেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরমশাই ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। তাঁরই উদ্যোগে বিভূতিভূষণও কোলাঘাটে এসে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এই শহরের সঙ্গে নাম জড়িয়ে রয়েছে অভিনেত্রী ছন্দা চট্টোপাধ্যায়েরও। জানা গিয়েছে, কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে ‘ফেরারি ফৌজ’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। কোলাঘাটের একাঙ্ক নাট্য চর্চার ইতিহাসও অনেকদিনের। কোলাঘাট একাঙ্ক নাটক সমিতির উদ্যোগে ১৯৫৮ সাল থেকে একাঙ্ক নাটক উৎসবও চলছে ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু স্থায়ী অডিটোরিয়ামের অভাবে বিভিন্ন সময়ে নাট্য উৎসবের স্থান বদল করতে হয়েছে। কোলাঘাট একাঙ্ক নাটক সমিতির সম্পাদক বিজন মিত্র বলেন, “শহরে কোনও অডিটোরিয়াম না থাকায় খোলা চত্বরে মঞ্চ বেঁধে নাটকের আয়োজন করতে হয়। আমরা চাই শহরের মাঝে থাকা কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুল সংলগ্ন পুরনো আবগারি দফতরের ডিপোর জায়গায় একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম গড়ে তোলা হোক। সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাগৃহটি সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে হলে ভাল হয়।”
বর্তমানে কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির একটি কমিউনিটি হল থাকলেও তা বড় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উপযোগী নয় বলে অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের। সমস্যার কথা স্বীকার করে কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানব সামন্ত বলেন, “কোলাঘাট শহরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির অফিস সংলগ্ন চত্বরে নতুন একটি ৮০০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম তৈরির জন্য হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ অর্থ বরাদ্দ করেছে। দ্রুতই সেই কাজ শুরু করা হবে। ওই অডিটোরিয়াম তৈরি হলে শহরের বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনেক সুবিধা হবে।”
সেই কাজ কবে হয়, তারই অপেক্ষায় কোলাঘাটের বাসিন্দারা।
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
কেমন লাগছে আমার শহর?
নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর মেদিনীপুর’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।