কর্নেলগোলার পুজোর ফেসবুক পেজ।
বোধন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। কম্পিউটারে করে সার্চ করে এখনই মিলছে শহরের পুজোর তথ্যতালাশ! কোনও পুজো কমিটি নিজস্ব ওয়েবসাইট বানিয়েছে। কোনও পুজো কমিটি আবার ফেসবুকে পেজ খুলেছে। মণ্ডপের কাজ কতদূর এগোলো, প্রতিমার কাজই বা কতদূর হয়েছে, ছবি দেখে জানা যাচ্ছে তাও! পুজো কমিটির কর্মকর্তারা নিয়মিত ছবি আপলোড করছেন! কয়েক বছর আগেও মফস্সল শহরে যেটা ভাবাই যেত না, এখন সেটাই হচ্ছে।
অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রাচীনতম পুজোগুলোর মধ্যে সদর শহরের কর্নেলগোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজো অন্যতম। এ বার পুজোর ৮০ তম বর্ষ। ওই পুজোর তথ্যও মিলছে ইন্টারনেটে। শহরের এই পুজোর যেমন ওয়েবসাইট রয়েছে, তেমন ফেসবুক-ট্যুইটারেপেজও রয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, “আমরা মেদিনীপুরের এই পুজোকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চাই।” কর্নেলগোলার পুজো শুরু হয়েছিল সেই ১৯৩৪ সালে। তখন ইংরেজ শাসন। শহরে জারি হয়েছে সান্ধ্যআইন। অর্থাৎ, সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ। উপলক্ষ্য মাতৃ আরাধনা হলেও এই পুজোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, শহরের বিপ্লবীদের সংগঠিত করা। ঐহিত্যের এই পুজোর যাবতীয় তথ্যই মিলছে ওয়েবসাইটে ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দা অভ্রজ্যোতি দত্তের কথায়, “এখন তো পুজো দেখতে অনেকেই ইন্টারনেট ঘাঁটেন। গেল বছর আমাদের পুজোও অনেকে ইন্টারনেটে দেখেছেন।”
রবীন্দ্রনগর নাগরিক সমিতির পুজোর এ বার ৪৫ তম বর্ষ। ফেসবুকে এই পুজোর নিজস্ব পেজে নিয়মিত ছবি আপলোড করছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের তরফে শুভজিৎ মণ্ডল বলেন, “আসলে পুজোর তথ্যতালাশে ইন্টারনেটই এখন সহজ মাধ্যম বলে মনে করে নবীন প্রজন্ম। আমরাও তাই ফেসবুকে পেজ খুলেছি”
ফেসবুকে প্রচার রবীন্দ্রনগরের পুজোর।
মেদিনীপুর শহরে শতাধিক দুর্গাপুজো হয়। এর মধ্যে কিছু পারিবারিক। বেশির ভাগই সর্বজনীন। কলকাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনে দিনে এই চল বেড়ে চলেছে। এখন শহরের অনেক পুজো কমিটিই খুঁটি পুজোর আয়োজন করে। এ বারও করেছে। রথযাত্রার দিন সাবেক বাড়ির দুর্গামূর্তির কাঠামোয় পুজো পড়ত। সেই কাঠামো পুজোর আঙ্গিকেই শুরু হয়েছে খুঁটি পুজোর চল। অনেকে আবার রথের দিনই কাঠামো পুজো করে প্রতিমা গড়া শুরু করেন। অনেকে তারও আগে প্রতিমা তৈরি শুরু করে দেন। খুঁটি পুজো, কাঠামোর পুজোর ছবিও ঠাঁই পাচ্ছে ইন্টারনেটে।
শহরের বড় বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে রাঙামাটি সর্বজনীনের পুজো অন্যতম। এই পুজোর এ বার ৪৬ তম বর্ষ। পুজো কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক গোপালচন্দ্র কর্মকারের কথায়, “এটা ঠিক, পুজোকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হলে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। আমরাও পেজ খোলার কথা ভাবছি।” চলটা শুরু হয়েছিল আগেই। নিখাদ ভালবাসা থেকে ওয়েবসাইটে মেদিনীপুরের পুজোর ছবি আপলোড করেন সঞ্জয় কুণ্ডু। শহরের বাসিন্দা সঞ্জয়বাবুর কথায়, “আমি যখন ছবি আপলোড করা শুরু করি, তখন ফেসবুক-ট্যুইটার চালু হয়নি। সেটা ১৯৯৮ সাল। পুজোর ছবি প্রবাসের অনেকেই দেখেন। আমার আপলোড করা ছবিগুলোও আমেরিকা, লন্ডন, দুবাইয়ের অনেকে দেখেছেন। অনেকে তাঁদের মতামতও জানান।” সেই ধারা বজায় রেখে এখন পুজো কমিটিগুলোও ওয়েবসাইট-ফেসবুক পেজ খুলছে। প্রস্তুতির ছবি আপলোড করছে।”
তাই ঢাকে এখনও কাঠি না পড়লেও ইন্টারনেটে কিন্তু জমে উঠেছে দুর্গাপুজো।
—নিজস্ব চিত্র।