প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনে শুভেন্দু অধিকারী।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে এ বার প্রশিক্ষণের উপর বেশি জোর দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকর্মীরা তো রয়েছেনই, সেই সঙ্গে এ বার থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাঁদের জানানো হবে, ইভিএমে ঠিক কী ভাবে ভোটগ্রহণ হয়, ভোট কেন্দ্রে যাঁরা থাকেন, তাঁদের দায়িত্বই বা কী। নির্বাচনী এজেন্টদের কোনও প্রশ্ন থাকলে, তার উত্তর দেবেন উপস্থিত আধিকারিকেরা। ধোঁয়াশা দূর করার চেষ্টা করবেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ওসি (ইলেকশন) বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সামান্য ভুলভ্রান্তিও হবে না। নির্বাচনী এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
কেন এমন উদ্যোগ? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “যত বেশি প্রশিক্ষণ শিবির হবে, তত ভুলভ্রান্তি কমবে। অনেক সময় সামান্য ভুলও বড় সমস্যার সৃষ্টি করে। তখন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ভোটকর্মীদের পাশাপাশি নির্বাচনী এজেন্টদের সব কিছু ভাল ভাবে জানা থাকলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে না। কারণ, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্ট হন।”
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে অবশ্য প্রশিক্ষণ-পর্ব শুরু হয়েছে জেলায়। সেক্টর অফিসারদের নিয়ে একদফা বৈঠক হয়েছে। আইসি, ওসি, বিডিও, এসডিওদের নিয়েও একদফা বৈঠক হয়েছে। মূলত, পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় আরও দৃঢ় করতেই ওই বৈঠক হয়েছে। যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি, জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ প্রমুখ। পশ্চিম মেদিনীপুরের কোন কোন এলাকা সংবেদনশীল, কী কারণে সংবেদনশীল, এলাকার পরিস্থিতি এখন কেমন, নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর কোন কোন এলাকায় কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, আলোচনায় এ সব উঠে আসে। এখন থেকেই এ সমস্ত দিকে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশও দেওয়া হয় বৈঠক থেকে। জেলায় বুথের সংখ্যা ৫৩৩৭টি। আগেও তাই ছিল। অর্থাৎ, এ বার আর নতুন বুথ হচ্ছে না। সাধারণত, ২ হাজারের বেশি ভোটার হলে নতুন বুথ খোলা হয়। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার-তালিকা অনুযায়ী জেলায় বুথপিছু সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে ১৩০৯ জন। লোকসভা নির্বাচন ইভিএমে হবে। সে ক্ষেত্রে এক-একটি বুথে চারজন করে ভোটকর্মী প্রয়োজন। একজন প্রিসাইডিং অফিসার, একজন ফাস্ট পোলিং অফিসার, একজন সেকেন্ড পোলিং অফিসার এবং একজন থার্ড পোলিং অফিসার। অর্থাৎ ভোটকর্মী প্রয়োজন ২১৩৪৮ জন। সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মী অর্থাৎ ২১৩৫ জন। সব মিলিয়ে ২৩৪৮৩ জন ভোটকর্মীর কাছে প্রশিক্ষণের চিঠি পাঠাতে হবে।
এ বার ভোটকর্মীদের ছোট ছোট দলে ভাল করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। এক-একটি দলে বড়জোর ৬০-৭০ জন থাকবেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “ছোট ছোট দলে ভাগ করে ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে সব দিক থেকে সুবিধে। ভোটকর্মীদের সকলে প্রশ্ন করতে পারবেন। উপস্থিত আধিকারিকেরা সেই সব প্রশ্ন ধরে ধরে উত্তর দেবেন। তাহলে আর কোথাও অস্বচ্ছতা থাকবে না।” তিনি বলেন, “কোথায় ডিসিআরসি হবে, কত সংখ্যক পুলিশ লাগবে, এগুলো ঠিক করতে বেশি সময় লাগে না। এগুলো প্রায় জানা। তাই এ বার আগে থেকে প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পদস্থ আধিকারিক থেকে নীচুতলার পুলিশকর্মী, সকলকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে তিনটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। সব প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে? ওই আধিকারিক বলেন, “কেন নয়? এক-একটি কেন্দ্রে যদি ১০ জন করেও প্রার্থী থাকে, তাহলে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের ৩০ জন নির্বাচনী এজেন্টকে সহজেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। শিবির থেকে ফিরে গিয়ে নির্বাচনী এজেন্টরা নিজ নিজ দলের বুথ এজেন্টদের নিয়ে প্রয়োজনে বৈঠক করবেন। কী আলোচনা হল, তা জানাবেন। নির্বাচনী এজেন্টদের পাশে এই অনুরোধও জানানো হবে।” ভোটকর্মীদের দু’দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনী এজেন্টদেরও দু’দফায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
সব মিলিয়ে, সুষ্ঠু ভাবে লোকসভা নির্বাচন কিছুটা আগে থেকেই সব রকম প্রস্তুতি সারতে শুরু করেছে প্রশাসন।