রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে এ বার একলব্যর দায়িত্ব

অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর পরিচালিত একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের পরিচালন-ভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী ৫ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে আদিবাসী স্কুলটির দায়িত্বভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যের ৭টি একলব্য আদর্শ বিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রামের স্কুলটিকেই রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪৩
Share:

অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর পরিচালিত একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের পরিচালন-ভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী ৫ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে আদিবাসী স্কুলটির দায়িত্বভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যের ৭টি একলব্য আদর্শ বিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রামের স্কুলটিকেই রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ নৃপেন টুডু বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালনায় স্কুলটির সার্বিক ভাবে উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।”

কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে এবং রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের পরিচালনায় একলব্য স্কুলগুলি পরিচালিত হয়। আদিবাসী ছেলে মেয়েরা বিনামূল্যে হস্টেলে থেকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই আবাসিক স্কুলে পড়াশুনার সুযোগ পায়। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও হস্টেল কর্মী নিয়োগ করা হয়।

Advertisement

এই স্কুলটিকে ঘিরে দীর্ঘ দিন ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ জমা পড়েছিল। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এর পরই ঝাড়গ্রাম একলব্য স্কুলের পরিচালন ভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলুড় মঠ ও মিশন-কর্তৃপক্ষও আবাসিক স্কুলটির দায়িত্ব নিতে সম্মত হন। তবে প্রশ্নও উঠেছে। স্কুলের বর্তমান ১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ১৫ জন অশিক্ষক ও হস্টেল কর্মীর ভবিষ্যত্‌ কী হবে!

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য অসন্তুষ্ট আদিবাসী সংগঠনগুলি। একাধিক আদিবাসী সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। আপত্তি-চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রীর জুয়াল ওরাম-এর কাছেও। আদিবাসী সংগঠনগুলির আশঙ্কা, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে স্কুলটির উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

আদিবাসীদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া মাঝি পারগানা মহল’-এর ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক সুন্দর টুডু বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার স্কুলটি সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে আদিবাসী ভাষায় পঠনপাঠন ও আদবাসী সংস্কৃতি চর্চা বিপন্ন হবে বলেই আমাদের আশঙ্কা।”

‘ঝাড়গ্রাম খেরওয়াল মাঝি মহল’-এর সম্পাদক যজ্ঞেশ্বর হেমব্রম বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় রাজ্য সরকারের পরিচালনায় স্কুলটি চলে। কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য রাজ্য সরকার আদিবাসীদের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছে। স্কুলের নামটিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। একলব্য নামটি আর থাকছে না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জঙ্গলমহল জুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে স্কুলটির দায়িত্ব গেলে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রটা বিস্তৃত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে।” তৃণমূল এসসি-এসটি সেলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, “যাঁরা আদিবাসীদের ভাল চান না, তাঁরাই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন