শারদোৎসবের মুখে ফের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল রেলশহরে। এ বারের ঘটনাটি ঘটেছে আবার থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। শনিবার রাতে খড়্গপুরের ওল্ড সেটলমেন্টে খরিদা যাওয়ার রাস্তায় দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে পূরণ গুপ্ত নামে এক ব্যবসায়ীর কয়েক হাজার টাকা ছিনতাই হয় বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি খরিদা এলাকারই বাসিন্দা।
যে এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, তার পাশেই খড়্গপুর টাউন থানা। আর ডিআইজি বাংলো মেরেকেটে একশো মিটার। রোজকার মতোই শনিবার রাতে বাসস্ট্যান্ডের কাছে দোকান বন্ধ করে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন কাঁসা-পিতলের বাসন ব্যবসায়ী পূরণ গুপ্ত। তাঁর ব্যাগে ছিল হাজার তিরিশেক টাকা। পূরণবাবুর অভিযোগ, “একটি মোটর সাইকেলে বসে থাকা তিন যুবকের একজন আমাকে ধাক্কা মারে। আমি পড়ে যাই। এরপরেই ওরা আমার টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়।” রাতেই টাউন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী। তবে রবিবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সম্প্রতি টাউন থানা এলাকায় একের পর এক চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তার তদন্তে নেমে কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো ছাড়া কোনও ঘটনারই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত ৯ সেপ্টেম্বর শহরের ইন্দার আনন্দনগরের এক মোবাইল দোকান থেকে রাতের অন্ধকারে কয়েক লক্ষ টাকার মোবাইল চুরির অভিযোগ ওঠে। ঠিক তার চব্বিশ ঘন্টা আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ইন্দারই একটি রেল কোয়ার্টার থেকে সোনার গয়না, নগদ-সহ কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ওই দু’টি ঘটনার তদন্তে নেমে পাঁচবেড়িয়া এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সুরাহা হয়নি। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর ইন্দার বন্ধ ব্যাঙ্কে ভল্ট ভেঙে টাকা চুরির চেষ্টা হয়। ৬ জুলাই মালঞ্চ ও নিমপুরা এলাকা পৃথক দু’টি ঘটনায় দুই রেলকর্মীর কয়েক লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনারও কিনারাও করতে পারেনি পুলিশ। গত মার্চে ইন্দার সিআইডি অফিসের সামনে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, প্রাতর্ভ্রমণে বেরনো প্রৌঢ়ার হার ছিনতাই করে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ছবিটা বেআব্রু হয়েছে বলে শহরবাসীর অভিযোগ।
খড়্গপুরের অনেক বাসিন্দাই জানালেন, বছর খানেক আগেও দিনে-রাতে পুলিশের বাইক বাহিনীকে টহল দিতে দেখা যেত। বিশেষত মালঞ্চ, ইন্দা, গোলবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। কিন্তু মাস খানেক হল এই ব্যবস্থা অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়েছে। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শহরের বাসিন্দা রাজা রায় বলেন, “গত বছর পুজোর আগে এ ভাবে চুরি-ছিনতাই দেখিনি। তবে এ বছর হচ্ছে। এর একটাই কারণ, পুলিশের টহলর কমেছে।” উৎসবের আগে এখন বাজারগুলিতে বহু টাকার লেন-দেন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভাল পরিমাণ টাকা নিয়ে রাতে ঘরে ফিরছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। এ দিকে, পুজোর মুখে একের পর এক ছিনতাই, চুরির ঘটনায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন আমজনতাও। পথেঘাটে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন মহিলারাও। মালঞ্চর বাসিন্দা মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার এক মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। পুজোর সময়ে বাজারে যাওয়া-আসা লেগেই আছে। সঙ্গে টাকা থাকে। কিন্তু রাস্তায় কোথাও পুলিশি টহল দেখছি না। যে হারে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে, চিন্তায় আছি।” শহরের বাসিন্দা গৌরব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এক কথায় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ সব মহলেই। শহরবাসীর অভিযোগ, উৎসবের মরসুমে চুরি-ছিনতাই ঠেকানো যেখানে পুলিশের প্রধান কাজ হওয়া উচিত, সেখানে তারা মোটর বাইক আরোহীর হেলমেট রয়েছে কিনা, তা দেখতেই বেশি ব্যস্ত। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের থেকে অনায্যভাবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে হয়রান করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অথচ ভিড় বাজারে দেখা যাচ্ছে না পুলিশ।
পুলিশ কর্তারা অবশ্য আশ্বাসই দিচ্ছেন। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “মানুষের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। পুলিশ সজাগ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নাকা চলছে। পুজোর আগে টহল আরও বাড়ানো হবে।