কেশপুরের খেতুয়ার পথসভায় তারকা প্রার্থী দেবকে অভ্যর্থনা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ভোটের প্রচারে এসে রোড শো তাঁর কাছে আর নতুন নয়। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অনেক জায়গাতেই হুড খোলা জিপে হাসিমুখে হাত নাড়াতে তাঁকে দেখেছে সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার নিজের গ্রাম কেশপুরে এককভাবে পথসভা করলেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেব। এ দিন অবশ্য হুড খোলা জিপে তিনি ছিলেন না। তবু এই পথসভার মাঝে মাঝেই তাঁর সাদা গাড়ি ঘিরে ধরেছিল উৎসাহী জনতা। আর কখনও গাড়ির ভিতর থেকে কখনও বা গাড়ি থেকে নেমে সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেন তিনি। যা একপ্রকার রোড শোয়েরই নামান্তর।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পর এর আগে একবার মহিষদায় দেশের বাড়িতে এসেছেন দেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এক জনসভায় থেকেছেন। তবে, কেশপুরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে দেবের প্রচার, বৃহস্পতিবারই প্রথম। দেবের মামার বাড়ি চন্দ্রকোনায়। ঘরের ছেলেকে নিয়ে কেশপুরের উৎসাহী থাকবে না, তা কী হয়? এ দিন সকাল থেকে বিকেল, সেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনারই ছবি ফুটে উঠল। তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থীর গাড়ি যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখানেই হয় শঙ্খধ্বনি-উলুধ্বনি, নয় তো ফুল ছড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। কোথাও দেবের গাড়ি ঘিরে ধরেছেন জনতা। বাধ্য হয়ে গাড়ির দরজা খুলে সকলের উদ্দেশে হাত নেড়েছেন টলিউডের ‘রংবাজ’। কোথাও জনতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করেছেন দেব। তাঁর বক্তব্যে ঘুরে ফিরে এসেছে কেশপুরের কথা। কখনও বলেছেন, “আমি আপনাদের ঘরের ছেলে। দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যখন বললেন, তোমাকে প্রার্থী হতে হবে, তখন প্রথমে আমি রাজি হচ্ছিলাম না। যখন শুনলাম আমি ঘাটাল থেকে দাঁড়াব, এক সেকেন্ডও লাগেনি হ্যাঁ বলার জন্য!”
উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেব বলেন, “অনেকে বলছেন, যদি দেব জেতে তাহলে কী আর এখানে আসবে? আমি বলছি, আসব। আগের সাংসদ যতবার এখানে এসেছেন, তার থেকে বেশিবার আসব। আগের সাংসদ যত কাজ করেছেন, তার থেকে বেশি কাজ করব।” নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আগ্রহী করে তুলতেও যে তিনি আগ্রহী তা বোঝাতে সংযোজন, “আমি চাই, নতুন প্রজন্মও রাজনীতিতে যুক্ত থাকুক। আমাদের কাজ নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা। আমি জিতে গেলেও সঙ্গে আছি। হেরে গেলেও সঙ্গে আছি। আমি চাই, আপনাদের ভাল হোক।”
সকালে আনন্দপুরের সভায় দেবের জন্য মায়ের কোলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল শুভশ্রী। বছর চারেকের শুভশ্রীর মা শুভ্রা দে সেনগুপ্ত কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। শুভ্রাদেবী বলেন, “দিন কয়েক ধরেই শুভশ্রীর শরীর ভাল যাচ্ছে না। কিন্তু দেবের কথা শুনেই আসবে বলে জেদ করে।” দেব যখন এ দিন মঞ্চে ওঠেন তাঁর হাতে গোলাপ দেয় ওই খুদে। এরপরই তাকে কোলে তুলে নেন দেব। যতক্ষণ সভা চলেছে ততক্ষণ কোল ছাড়া করেননি তাকে। তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থী বলেন, “আপনাদের সঙ্গে দেখা করে ভীষণ ভাল লাগছে। আপনাদের আশীর্বাদ-দোয়া নিতেই এখানে এসেছি। রাজনীতি করতে আসিনি। আপনাদের ভাল করতে এসেছি। আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই। আপনাদের জন্য কাজ করতে চাই।”
এ দিন দেব পথসভাগুলো মাতিয়েছেন নিজের স্টাইলেই। কোথাও বলেছেন, “হ্যালো কেশপুর। কেমন আছেন? আপনারা সকলে ভাল আছেন তো?” কোথাও বলেছেন, “বড়দের প্রণাম। ছোটদের অনেক অনেক ভালবাসা। আপনারা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” এ দিন তেঘরি থেকে প্রচার-কর্মসূচি শুরু করেন দেব। পরে আনন্দপুর, সাহসপুর, শ্যামচাঁদপুর, খেতুয়া, মুগবসান, সরষাকোলা, বিশ্বনাথপুর, ঝেঁতলা, ধলহারা প্রভৃতি এলাকায় পথসভা করেন। কর্মসূচি শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। তিনি যে আবার কেশপুরে আসবেন, তাও মনে করিয়ে দেন তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থী। তাঁর কথায়, “আমি কেশপুরের ছেলে। আবার এখানে আসব। কথা দিচ্ছি।” কেশপুরে শান্তি বজায় রাখারও আর্জি জানান দেব। সভায় তিনি বলেন, “আমি যখন ছোটবেলায় কেশপুরে থাকতাম, তখন গোলমাল হত। আমি চাই কেশপুরে শান্তি থাকুক। আপনারা সবাই ভালভাবে থাকুন।” এ দিন সবমিলিয়ে ১৪টি সভা করেন দেব।
দুপুরে মেদিনীপুরে ফিরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তিনি বিকেলে ফিরে যান কেশপুরেই।