সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারানোর ‘পুরস্কার’ হিসেবে জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি থেকে উন্নীত হয়েছিলেন রাজ্য তৃণমূলের যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম এই কাণ্ডারি রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন। পাঁচ বছর পরে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জেতার পরেও সেই পদ থেকে সরানো হল শুভেন্দুকে। এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরেই।
দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার দলের সাংগঠনিক রদবদল হয় কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেখানেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে শুভেন্দুবাবুকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হয়। এতে কী দলে নিজের গুরুত্ব কমল? এমন প্রশ্ন উড়িয়ে তমলুকের সাংসদের প্রতিক্রিয়া, “পাঁচ বছর ওই পদে ছিলাম। আমি নিজেই ওই পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম। দলনেত্রী এ বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা মেনে চলব।” দলনেত্রীর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দুবাবুর পিতা তথা তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দুবাবুকে সরিয়ে ওই পদে আনা হয়েছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী সাংসদ সৌমিত্র খানকে। এমন সিদ্ধান্তে শুভেন্দুর অনুগামীরা যে ক্ষুদ্ধ তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলছেন, “এই সিদ্ধান্তের পরে নন্দীগ্রামের অনেক কর্মী-সমর্থকরা এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি তাঁদের সদুত্তর দিতে পারিনি।” এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের নির্বাচিত সদস্য রণজিৎ দাস পদত্যাগ করেছেন। তিনি এ দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “শুভেন্দুবাবুকে এ ভাবে সরানোর প্রতিবাদে সংসদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছি।” রাজ্য রাজনীতি থেকে তাঁকে সরনোর জন্যই এই চক্রান্ত করা হয়েছে বলে রণজিৎবাবুর অভিযোগ। তাঁর বিশ্বাস, ‘দলনেত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’ হলদিয়ায় আর এক যুবনেতা যশোরাজ ব্রহ্মচারীর হুমকি, “যাঁদের চক্রান্তে শুভেন্দুবাবুকে সরতে হল, তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে। না হলে আমরা শনিবার থেকে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি করব।’’
এই প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বলেন, “এমন সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ তৃণমূল নেত্রী তাঁর সমকক্ষ কোনও নেতাকেই দলে যোগ্য স্থান দিতে চান না।” এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষকে ফের একবার অপমান করা হল বলে তাঁর অভিমত।