এক শ্রমিক খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার পাঁচখুরিতে। মৃতের নাম গৌরাঙ্গ দাস (৩৮)। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভবানীপুর এলাকায়। গৌরাঙ্গবাবু স্থানীয় এক বেসরকারি বিএড কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ করতেন। কাজের সূত্রেই তিনি পাঁচখুরিতে থাকতেন। সোমবার সন্ধ্যায় গৌরাঙ্গবাবু বাজারে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, বাজার থেকে ফেরার পথে কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। পরে এ দিন রাতে প্রস্তাবিত কলেজ ভবনের কিছু দূরে ফাঁকা জমি থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কারা কেন ওই শ্রমিককে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করল, এ সব নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। এ দিন রাতেই দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ওই এলাকায় একজনকে খুন করা হয়েছে। কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই পুলিশের দাবি। স্থানীয় সূত্রেও এই ইঙ্গিত মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্থানীয় কোনও বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। গৌরাঙ্গবাবু স্থানীয় কেউ নন, তিনি কাজের জন্য এখানে এসেছিলেন, দুস্কৃতীরা কেন তাঁকেই খুন করল, তদন্তে নেমে গোড়ায় এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের এক সূত্রে খবর, তদন্তে ইতিমধ্যে কিছু সূত্র মিলেছে। সেই সব সূত্র ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুলিশের ধারনা, দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করা যাবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ন’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দিন সন্ধ্যায় আরও তিন জন সহকর্মীর সঙ্গে স্থানীয় বাজারে গিয়েছিলেন গৌরাঙ্গবাবু। তাঁরা চার জন একসঙ্গেই ফিরছিলেন। ফেরার পথে একদল দুষ্কৃতী তাঁদের ঘিরে ধরে। গৌরাঙ্গকে আটকে রেখে বাকি তিনজনকে তারা চলে যেতে বলে। তাঁরা চিৎকার করলে খুন করারও হুমকি দেয়। দুষ্কৃতীদের ধমক খেয়ে বাকি তিন জন পালিয়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ সময় গড়িয়ে গেলেও প্রস্তাবিত কলেজ ভবনে গৌরাঙ্গবাবু ফিরছেন না দেখে তাঁর খোঁজ শুরু হয়। পরে কিছু দূরে এক জমিতে তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্ণ ছিল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। আসেন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। রাতেই দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, কলেজ নির্মাণের কাজে বাধা দিতে দুষ্কৃতীরাই এই কাজ করেছে। আগেও কয়েকবার কলেজ ভবন নির্মাণে নানা ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে মৃণালকান্তি বারিক বলেন, “আমরা পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করে অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করুক।” তাঁর কথায়, “আমাদের মনে হচ্ছে, দুষ্কৃতীরা কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে চায়। সেই জন্যই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। একজনকে খুন করে আমাদের মধ্যে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। আগেও নানা ভাবে কলেজ নির্মাণের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যও কাজে বাধা দিয়েছেন। পুলিশের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। পুলিশ নিশ্চয়ই অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করে তাদের গ্রেফতার করবে।” স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আসরাফ আলি বলেন, “মঙ্গলবার সকালে শুনেছি, একজন খুন হয়েছেন। এর বেশি কিছু জানি না।” পাঁচখুরির সাঁকোটি এলাকায় প্রায় এক বছর আগে প্রস্তাবিত এই বিএড কলেজ ভবন নির্মাণ শুরু হয়। সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। অনুমোদন মিললে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কলেজে পঠনপাঠন শুরু করার ইচ্ছে ছিল কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।