পুরসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করে সংগঠন গোছানো শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। পুরভোটে সাফল্য পেতে এ বার শহর-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হল। দলের মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে বিজেপির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য নেতা তথা জেলার পর্যবেক্ষক শ্যামাপদ মণ্ডল। সেখানে পুরভোট নিয়ে আলোচনা হয়। সদস্য সংগ্রহে গুরুত্ব দিতে বলা হয়।
বিজেপি সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে দেড় লক্ষ সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ চলবে। দলের ওই সূত্রের খবর, বৈঠকে নেতৃত্ব এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ৩১ মার্চের পর জেলা কমিটি পুনর্গঠন হতে পারে। যাঁরা সক্রিয় তাঁরা কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। যাঁরা নিস্ক্রিয় তাঁরা কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন।
অবশ্য এই বৈঠক নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। তিনি শুধু বলেন, “এটা আমাদের সাংগঠনিক বৈঠক। আমরা জেলার সর্বত্রই সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করছি।”
দল কি শহর-ভিত্তিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে? তুষারবাবুর জবাব, “পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পুর-এলাকায় জেলা নেতাদেরই পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
চলতি বছরে জেলার ছ’টি পুরসভায় ভোট রয়েছে। ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত পাঁচটি পুরসভা এবং খড়্গপুর। গত লোকসভার ফলকে বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি ধরলে খড়্গপুর সদরে এগিয়ে রয়েছে বিজেপিই। এখানে দলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ হাজার। যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪০ হাজার। কংগ্রেস ২১ হাজার। গেরুয়া-শিবির আশাবাদী, এ বার খড়্গপুর পুরসভা তাদের দখলেই আসবে। অবশ্য রেলশহরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও রয়েছে। এর প্রভাব পুরভোটেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। দলের এক সূত্রে খবর, যে সব শহরে পুরভোট হবে, সেখানে কোথাও একজন, কোথাও দু’জন, কোথাও বা তারও বেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, রেলশহরে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ নেতা প্রদীপ পট্টনায়েক। ঘাটালে বিকাশ দে, রামজীবনপুরে ধীমান কোলে, ক্ষীরপাইয়ে সৌমেন তেওয়ারি, খড়ারে প্রদীপ লোধা, চন্দ্রকোনায় নিরঞ্জন শীট।
বিজেপির এক রাজ্য নেতা জানান, আপাতত জেলা নেতাদেরই পর্যবেক্ষক করে পুর-এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। কোথাও একজন, কোথাও একাধিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এঁদের অধীনেও পর্যবেক্ষক থাকবে। এক-একজনকে কয়েকটি করে ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁরা তাঁদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডে দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভাল করবেন। বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, আপাতত তাঁরা বুথ-ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার উপরই সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছেন। দলের সবস্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে বলেও এদিন বৈঠকে জানিয়েছেন নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের পর বিভিন্ন এলাকায় দলের কর্মী সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই দলে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন করছেন। পরিবর্তীত এই পরিস্থিতিতেই সংগঠনকে শৃঙ্খলায় বাঁধার চেষ্টা করছেন নেতৃত্ব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। দলের এক সূত্রে খবর, বৈঠকে উপস্থিত মণ্ডল সভাপতিদের উদ্দেশে তুষারবাবু বলেছেন, “নতুন কাউকে দলে নিতে হলে আগে জেলায় জানাতেই হবে। আমরা দলে কোনও বেনোজল ঢুকতে দেবো না। যাঁরা দলে আসবেন, তাঁদের ভাবমূর্তি অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে।” তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, “দায়িত্ব পালন না করতে পারলে পদে থাকার অধিকার নেই। কাজ না করতে পারলে অব্যাহতি নিতে হবে। এতে খারাপ লাগার কোনও কারণ নেই। নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে।” অবশ্য জেলা সভাপতির এই বার্তা মণ্ডল সভাপতিদের কাছে নতুন কিছু নয়। কারণ, গত কয়েক মাসে রাজ্য থেকে যাঁরাই জেলায় এসেছেন, তাঁরাই এমন বার্তা দিয়ে গিয়েছেন।
বিজেপি-র এক সূত্রের দাবি, ৩১ মার্চের পর দলের কয়েকটি মণ্ডল সভাপতি পদে রদবদল হতে পারে। এই সম্ভাবনার কথা মেনে বিজেপির এক জেলা নেতা বলেন, “সদস্য সংগ্রহ অভিযানে কে কী ভূমিকা পালন করছেন, তা দেখা হচ্ছে। এলাকা থেকে আমাদের কাছে কিছু খবরও আসছে। বিজেপিকে ঘিরে মানুষের অনেক আশা-প্রত্যাশা।” দলের এক সূত্রে খবর, দিন তিনেক আগে চার জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে খড়্গপুরে বিজেপির এক বৈঠকও হয়েছে। সেখানেও সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।