কংসাবতীর গাঁধীঘাট এলাকার এই সেতু নির্মাণ নিয়েই সমস্যা।
খালের উপর নিজেদের খরচে কাঠের সেতু তৈরি করতে চেয়ে মেদিনীপুর পুরসভার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন পুর এলাকা ও আশেপাশের কিছু বাসিন্দা। পুর-কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েও দিয়েছেন। আর তা নিয়েই উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ।
সরকারের এলাকায় কী করে যে কেউ কোনও নির্মাণকাজ করতে পারে? আর পুরসভাই বা তার অনুমোদন দেয় কী করে? আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের কথায়, “এলাকার লোক যদি টাকা তুলে পুরসভাকে দেয় এবং সেই টাকায় পুরসভা সেতু বানায় তাহলে সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু স্থানীয়রা নিজের টাকায় সেতু বানালে পুরসভা তাতে অনুমতি দিতে পারে না।” মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য দাবি, “এ ক্ষেত্রে বেআইনি কিছুই হয়নি। নিয়ম মেনেই চুক্তি হয়েছে।” আর যারা ওই সেতু বানাতে চেয়ে আবেদন করেছেন, তাঁদের বক্তব্য, “সেতু হলে তো সকলেরই সুবিধা হবে।”
ঘটনাটি মেদিনীপুর শহরের গাঁধীঘাট এলাকার। এই এলাকা শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। মেদিনীপুর শহরের সব থেকে বড় নিকাশি খাল হল দ্বারিবাঁধ খাল। এই খাল গাঁধীঘাট এলাকার উপর দিয়েও গিয়েছে। গত মাসে এই খালের উপর একটি কাঠের সেতু তৈরি করার অনুমতি দিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, যারা সেতু বানাতে চান, তাঁরা আসলে অবৈধ বালি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বালি গাড়ি যাতায়াতের জন্যই নিজ উদ্যোগে তাঁরা সেতু তৈরি করতে চেয়েছেন। প্রতিবাদ জানিয়ে পুরপ্রধানকে চিঠিও দিয়েছেন কৌস্তভবাবু। পুরসভার পদক্ষেপের বিরোধীতা করে সোমবার এলাকায় এক বৈঠকও করেন কংগ্রেস কাউন্সিলর। কেন তাঁকে অন্ধকারে রেখে পুরসভা এমন সিদ্ধান্ত নিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কৌস্তভবাবু। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, সেতু তৈরির জন্য তো পুরসভার কোনও অর্থ খরচ হবে না। ফলে, এ নিয়ে বিতর্কের কিছু থাকতে পারে না!
ওই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কাউন্সিলরের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে কাঁসাই নদী। নদীর একদিকে মেদিনীপুর। অন্যদিকে খড়্গপুর। মেদিনীপুর শহরের গাঁধীঘাট এলাকাও রয়েছে ঠিক নদীর পাশেই। নদীর আশপাশের এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলার অভিযোগ নতুন নয়। মোহনপুরের কাছে অ্যানিকেত রয়েছে। এখানে জল ধরে রাখা হয়। যথেচ্ছ বালি তোলার ফলে এই অ্যানিকেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। পাশাপাশি, যত্রতত্র গর্ত তৈরি হয়। জল থাকলে এই সব গর্ত দেখা যায় না। ফলে, নদীর ধারে এসে অনেকেই বিপদের মুখে পড়েন। চোরা বালিতে ঢুকে যান। এখন আবার মেশিনের সাহায্যে বালি তোলা হয়। ফলে, বড় গর্ত তৈরি হয়। খড়্গপুরের দিকে বাঁশের সেতু রয়েছে। এই সেতু দিয়ে সড়ক পথে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পৌঁছনো যায়। অসাধু বালি-ব্যবসায়ীরা বালি বোঝাই লরি নিয়ে আসা- নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পথ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের একাংশের আরও অভিযোগ, প্রশাসনের একাংশের মদতেই নদীর আশপাশ থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা চলে। এর পিছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাঁরাই প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে এই কারবার চালান। এর ফলে, একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়, তেমনই সাধারণ মানুষকেও বিপদের মুখে ফেলা হয়। প্রশাসনের অবশ্য বক্তব্য, অবৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ করতে তৎপরতার অভাব নেই। এ ক্ষেত্রে নজরদারি চলে। অবৈধ বালি বোঝাই লরি ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।