সচেতনতা বাড়ায় পিছিয়ে পড়া স্কুলে বেড়েছে সাফল্য

মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশের হার রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতেও সাফল্যের হার নজরকাড়া। হলদিয়া ব্লকের মনোহরপুর হাইস্কুলে ২০০৪ সালে মাধ্যমিক দিয়েছিল মাত্র ৭ জন। সংখ্যালঘু ও তফশিলি অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া এলাকার এই স্কুলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৬৮ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া ও কাঁথি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশের হার রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতেও সাফল্যের হার নজরকাড়া।

Advertisement

হলদিয়া ব্লকের মনোহরপুর হাইস্কুলে ২০০৪ সালে মাধ্যমিক দিয়েছিল মাত্র ৭ জন। সংখ্যালঘু ও তফশিলি অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া এলাকার এই স্কুলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৬৮ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রাণনাথ শেঠের কথায়, “এই স্কুল না থাকলে এদের পড়া বন্ধ হয়ে যেত। বহু চেষ্টায় এদের স্কুলে আমার পাশাপাশি এদের কম ‘ফি’ নেওয়া, বইও দেওয়া হয়।” ওই স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক পেশায় রিকশা চালক নিতাই সামন্ত বলেন, “আমরা চাই না, আমাদের ছেলেমেয়ে এই পেশায় আসুক। তুলনায় একটু ভাল কাজ পেতে হলে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে তো হবেই।” পড়াশোনা নিয়ে সচেতনতা আগের থেকে বাড়ায় পরীক্ষার ফলও ভাল হচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষকদের একাংশের।

তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া সাঁপুয়া হাইস্কুল। এবার ওই স্কুলের ৯৫ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯২ জন পাশ করেছে। অন্যবারের থেকে পাশের হার বেশি থাকার কারণ সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক দিণ্ডা বলেন, “বিশেষ ক্লাস নেওয়া, স্কুলের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে আনতে স্কুলের ধারাবাহিক উদ্যোগই এর কারণ।”

Advertisement

কাঁথি মহকুমা এলাকার বিভিন্ন স্কুলগুলির ফলও এবার ভাল। মকুমার প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলির ফলও আশাপ্রদ। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াই সাফল্যের হার বাড়ার একমাত্র কারণ বলে মানছেন অধিকাংশ শিক্ষকই। দেপাল বাণেশ্বর চারুবালা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল বেরার মতে, “ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় যেমন একাগ্রতা বেড়েছে, তেমনি তাদের অভিভাবকদেরও সচেতনতা বেড়েছে। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও বুঝে গিয়েছে, ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে ভাল রেজাল্ট করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। আর পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য তারা পড়াশোনার উপর অনেক বেশি জোর দিচ্ছে। ফলে আদের থেকে সাফল্যের হারও বাড়ছে।”

প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলিতে ভাল ফল সম্পর্কে পুর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “জেলার প্রায় ২০০টি মাধ্যমিক স্কুল সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত এলাকায় অবস্থিত। তবে শিক্ষা নিয়ে জেলার মানুষের সচেতনতা বেশি। সচেতন ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবক। তাই সাধারণ মান পর্যন্ত প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও তরফেই তেমন আপত্তি তাকে না। তাছাড়াও গত কয়েক বছরে বহু স্কুলকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে বাড়ির কাছে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।” মামুদ হোসেনের কথায়, “গত কয়েক বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি শিক্ষারও মানোন্নয়নও ঘটেছে। যার সুফল পাওয়া যাচ্ছে মাধ্যমিক স্তরে।” পুর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী নন্দী বলেন, “বিদ্যালয়ে শিক্ষকের দায়বদ্ধতা থাকাও সাফল্যের একটা বড় কারণ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরকারি নানা সহায়তা প্রকল্পও পড়ুয়া-অভিভাবকদের উৎসাহিত করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন