সন্ত্রাসের নালিশের মধ্যেই পাশাপাশি চার দলের এজেন্ট

ভোট দেখতে এসছেন? যান গোটা খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রের ২১২ টি বুথ ঘুরে দেখুন, কোথাও রিগিং, ছাপ্পা ভোট হচ্ছে কিনা! কলাগেছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আশা ভবনে দেখা হতেই বলে উঠলেন খেজুরির তৃণমূল নেতা ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস। পার্থবাবু আরও বললেন, “এতদিন সিপিএমের শাসনে খেজুরিতে লোকসভার ভোট দেখেছেন। এ বার তৃণমূলের শাসনে কেমন ভোট হচ্ছে দেখে সত্যি কথা লিখবেন কিন্তু।’’

Advertisement

সুব্রত গুহ

খেজুরি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০২:০৯
Share:

খেজুরির ঘোলাবাড়ের একটি স্কুলের বুথে ভোটদানের অপেক্ষা। ছবি: সোহম গুহ।

ভোট দেখতে এসছেন? যান গোটা খেজুরি বিধানসভা কেন্দ্রের ২১২ টি বুথ ঘুরে দেখুন, কোথাও রিগিং, ছাপ্পা ভোট হচ্ছে কিনা! কলাগেছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আশা ভবনে দেখা হতেই বলে উঠলেন খেজুরির তৃণমূল নেতা ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস। পার্থবাবু আরও বললেন, “এতদিন সিপিএমের শাসনে খেজুরিতে লোকসভার ভোট দেখেছেন। এ বার তৃণমূলের শাসনে কেমন ভোট হচ্ছে দেখে সত্যি কথা লিখবেন কিন্তু।’’

Advertisement

পার্থবাবুর বক্তব্য যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, তা বোঝা গেল খেজুরি-২ ব্লকের সব থেকে স্পর্শকাতর বুথ ঘোলাবাড় মুসলিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে। খর রোদেও মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লাইনে দাঁড়িয়ে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জন জওয়ান বুথ সামলাচ্ছেন। রাহেনা বিবি, বাপি দাস, শেখ মুজিবররা শান্তিতেই ভোট দিচ্ছেন। বুথের সেক্টর অফিসার জনালেন, বেলা ১১টাতেই প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পড়ে গিয়েছে। চড়া রোদের জন্যই হয়তো বেলা একটার মধ্যে কামারদা, কলাগেছিয়া, বারাতলা, টিকাশি অঞ্চলে ভোট পড়েছে তড়তড়িয়ে। দিনের শেষে কাঁথি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশের উপর।

শান্তির এই ভোটের মধ্যেও বিরোধীরা কিন্তু কোণঠাসা। খেজুরির ২১২টি বুথের অধিকাংশতেই বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টের দেখা মেলেনি। সিপিএম গোটা কুড়ি, কংগ্রেস ১২টি আর বিজেপি মাত্র ১৮টি বুথে এজেন্ট দিতে পেরেছিল। টিকাশি অঞ্চলের দক্ষিণ চিঙ্গুরদনিয়া বুথে আবার সহাবস্থানের বিরল ছবিও দেখা গেল। তৃণল, কংগ্রেস, সিপিএম বিজেপি সব দলেরই এজেন্ট ছিল বুথে। খেজুরি-২ ব্লকের ১০৯টি বুথের মধ্যে ৩৮টি বুথই ছিল স্পর্শকাতর। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা ছাড়াও ৬১টি বুথে ভিডিও ক্যামেরা, ৪টি বুথে মাইক্রো অবজারভারের ব্যবস্থা ছিল। নিরাপত্তার এই ঘেরাটোপের মধ্যেও ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ইটাবেড়িয়া, অর্জুননগর, বাসুদেববেড়িয়া, বরোজ ও মুগবেড়িয়া অঞ্চলে তৃণমূল বুথ দখল করে ব্যাপক ছাপ্পা দিয়েছে বলে সিপিএমের মুগবেড়িয়া জোনাল সম্পাদক বিষ্ণুহরি মান্নার অভিযোগ। কংগ্রেস প্রার্থী কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ি খেজুরি, ভগবানপুর রামনগর ও পটাশপুরে তৃণমূলের ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছেন।

Advertisement

ভগবানপুরে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহকে মারধরের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নান্টু প্রধানের নেতৃত্বে তৃণমূল মহম্মদপুর ১ অঞ্চলে বহু বুথ দখল করে বলে এ দিন অভিযোগ উঠেছে। তাপসবাবু বলেন, “পুলিশ নান্টু প্রধানকে খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ পুলিশের উপস্থিতিতেই নান্টু বুথ দখল ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে।” দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের শ্রীরামপুর পশ্চিম ও সাহাজাদপুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি এরশাদ আলি। সাহাজাদপুর এভিএম মেশিন খারাপ হওয়ায় কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। কাঁথি শহরের মুসলিম বালিকা বিদ্যালয়ে ভোটযন্ত্রে শিশির অধিকারীর প্রতীকের পাশে নীল দাগ থাকা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই দাগের উপর সাদা কাগজ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়।

শান্তির ভোটের পর জয় নিয়ে নিশ্চিত তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হয়েছে। তৃণমূলই কাঁথিতে জিততে চলেছে।” প্রত্যয়ী সিপিএম প্রার্থীও। তাপস সিংহের দাবি, তৃণমূলের ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়েছেন। বামপন্থীরাই জয়ী হবে।

সহ প্রতিবেদন: কৌশিক মিশ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন