পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক

সব বুথই দখল হয়, কবুল রিপোর্টে

পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন কার্যত প্রহসন ছিল বলে ভোটের দিন থেকেই অভিযোগ করে আসছে বাম-সহ বিরোধী শিবির। খোদ অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার (এআরও) কৌশিক চক্রবর্তীর রিপোর্টও সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন কার্যত প্রহসন ছিল বলে ভোটের দিন থেকেই অভিযোগ করে আসছে বাম-সহ বিরোধী শিবির। খোদ অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার (এআরও) কৌশিক চক্রবর্তীর রিপোর্টও সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল।

Advertisement

ওই রিপোর্ট বলছে, ২৪টি বুথের সবক’টিই সে দিন দখল হয়ে গিয়েছিল। ছাপ্পা ভোটও পড়েছে। রিপোর্টে কৌশিকবাবু দাবি করেছেন, তিনি সেই দিন জয়ী প্রার্থীদের সার্টিফিকেট ইস্যু করতে চাননি। রিটার্নিং অফিসারই তাঁকে সার্টিফিকেট ইস্যু করতে চাপ দেন। বাধ্য করেন। এই রিপোর্ট সামনে আসার পরই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুনর্নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা।

এআরও কৌশিকবাবু অবশ্য তাঁর এই রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন, “যা জানানোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে সে দিনই জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না।” কী বলছেন রিটার্নিং অফিসার তথা জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিষ্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস) মদনমোহন ঘোষ? সত্যিই কী তিনি সার্টিফিকেট ইস্যু করতে চাপ দিয়েছিলেন? রবিবার মদনমোহনবাবুর দাবি, “এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।”

Advertisement

বিরোধীরা অবশ্য নিজেদের দাবি থেকে সরতে নারাজ। সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছি, পিপলস্ ব্যাঙ্কের নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। এআরও-র রিপোর্ট থেকেও তা স্পষ্ট। শহরের বুকে ওই দিন তৃণমূলের লোকজন ভোট লুঠ করেছে। পুলিশ নীরব দর্শক থেকেছে।” কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ওই দিন বুথ এজেন্ট ছিলাম। চোখের সামনে যা দেখেছি তা তো ভুল হতে পারে না। বেলা একটু গড়াতেই একের পর এক বিরোধী এজেন্টকে মেরেধরে বের করে দেওয়া হয়েছে।” একই দাবি বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের। তাঁর অভিযোগ, “বুথ দখল থেকে ছাপ্পা ভোট, সবটাই হয়েছে পরিকল্পনামাফিক। পুলিশ তৃণমূলকে সব রকম সহযোগিতা করেছে।”

শাসক তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি রবিবার বলেন, “আমরা আগে যা বলেছি, এখনও তাই বলছি। পিপলস্ ব্যাঙ্কের ভোটে যে বিপুল জয় এসেছে, তা মানুষেরই জয়। ওই দিন কোনও বুথ দখল হয়নি। ছাপ্পা ভোটও পড়েনি।” খোদ এআরও-র রিপোর্টই তো অন্য কথা বলছে? মৃগেনবাবুর জবাব, “কে কী রিপোর্ট দিয়েছেন জানি না। মানুষ পাশে ছিলেন বলেই আমরা বিপুল জয় পেয়েছি।”

২২ ফেব্রুয়ারি পিপলস্ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ছিল। দীর্ঘ দিন ধরে বামেদের দখলে থাকা এই সমিতির দখল নেয় তৃণমূল। নির্বাচনের দিনই বাম-সহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল, তৃণমূল খড়্গপুর থেকে গুন্ডা-বাহিনী এনেছে। ওই বাহিনী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে একের পর এক বুথ দখল করে অবাধে ছাপ্পা দিয়েছে। পুলিশ সব দেখেও নীরব দর্শক থেকেছে। এক সময় ভোটারদেরও বুথের সামনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। বহু ভোটার এসে দেখেছেন, তাঁদের ভোট হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে শহরের বহু বিশিষ্ট মানুষও আছেন।

সমবায় দফতরের এক সূত্রেরই খবর, ওই দিন ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন এআরও কৌশিকবাবু। ভোটে যে গোলমাল হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে, গোড়ার দিকের রিপোর্টেই সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারকে পাঠানো রিপোর্টে জানান, পুলিশ অপর্যাপ্ত ছিল। কোনও বুথের সামনেই পুলিশ ছিল না। কৌশিকবাবু তাঁর রিপোর্টে দাবি করেছেন, জোর করে যারা বুথে ঢুকে পড়ে, তারাই রেজাল্ট শিট তৈরি করতে বাধ্য করে।

ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে বামেরা। বাম সমর্থিত প্রার্থীদের উদ্যোগে রবিবার মেদিনীপুর শহরের এক সভাঘরে গণ- কনভেনশনও হয়। সেখানে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। ব্যাঙ্কের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎবিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।”

গত পুরসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। আর একটা আসন কম পেলে হয়তো পুরবোর্ডই গঠন করতে পারত না শাসক দল। এখন আবার খাগড়াগড়, সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের টালমাটাল অবস্থা। এই আবহে শহরের এই সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির দখল নেওয়াটা যে খুবই জরুরি ছিল, তা মানছে তৃণমূল শিবির। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি হয়তো হয়েছে। তবে এই জয়টা খুব দরকার ছিল। বিশেষ করে মেদিনীপুর শহরে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন