পটাশপুরের তৃণমূলের এক কার্যালয়ে চলছে মিষ্টিমুখ। —নিজস্ব চিত্র।
সমবায় দফতরের পরিষদীয় সচিব থেকে ওই দফতরেরই মন্ত্রীপদে উন্নীত হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর। বর্ষীয়ান এই বিধায়ক জেলার রাজনীতিতে ‘অধিকারী পরিবারের’ বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত। তৃণমূলেরই একাংশের মত, দুই মেদিনীপুরের কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, বিদ্যাসাগর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন শুভেন্দু। বিরোধী শিবিরের জ্যেতির্ময়বাবুকে সেই সমবায় দফতরেরই মন্ত্রী করে কার্যত নজরদারি চালানোর পাকাপাকি ব্যবস্থা করা হল। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য মন্ত্রীসভায় বুধবারের রদবদল শুভেন্দু শিবিরের রক্তচাপ আরও বাড়াবে।
সেই ‘জল্পনা’ আরও উস্কে দিয়েছে শুভেন্দু-শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের মন্তব্য। জ্যোর্তিময়বাবুর মন্ত্রিত্ব প্রসঙ্গে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু’র সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “উনি অন্য লোকসভা এলাকার বিধায়ক। তাই আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” মন্তব্য করতে চাননি কাঁথির সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারীও।
উল্টো দিকে, ‘অধিকারী পরিবারের’ বিরোধী শিবিরের অন্যতম নেতা তথা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি জ্যোতির্ময়বাবুর মন্ত্রীত্বে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। অখিলবাবু এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জেলার উন্নয়নে কতটা গুরুত্ব দেন, জ্যোতির্ময়বাবুকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।” জ্যোতির্ময়বাবুর প্রশংসা করে তিনি বলেন, “উনি কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সমবায়ের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি সফল ও অভিজ্ঞ।” এমন একজন মন্ত্রী হওয়ায় সমবায় দফতর আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি। জ্যোতির্ময়বাবুর মন্ত্রীত্বে খুশি কোলাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরীও।
পূর্ব মেদিনীপুরের তৃতীয় মন্ত্রী হিসেবে এ দিন জ্যোতির্ময়বাবু শপথ নিলেন। এর আগে ২০১১ সালেই জেলা থেকে তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র ও মহিষাদলের বিধায়ক সুদর্শন ঘোষদস্তিদার মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছিলেন। সমবায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করব।”
আদতে কাঁথি ২ ব্লকের মুকুন্দপুর এলাকার বাসিন্দা জ্যোতির্ময় কর পটাশপুরের পালপাড়া যোগদা সৎসঙ্গ মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কাঁথি কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জ্যোতির্ময়বাবু যুব কংগ্রেস ও সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিন দফায় প্রায় ৯ বছর কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে কাঁথি উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক হন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য ওই কেন্দ্রেরই সিপিএমের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০১১ সালে পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে ফের জয় পান। গত বছরেই রাজ্যের সমবায় দফতরের পরিষদীয় সচিব হয়েছিলেন জ্যোতির্ময়বাবু।
এলাকায় বিধায়কের মন্ত্রী হওয়ার খবরে পটাশপুর এলাকায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তেমন কোনও উচ্ছ্বাস এ দিন নজরে আসেনি। তবে কোনও কোনেও জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে এ দিন মিষ্টিমুখ করা হয়। দলীয় কর্মীরাও অনেকটা সচেতন হয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তবে পটাশপুর ১ ব্লক সভাপতি তাপস মাজি বলেন, “শিশির-শুভেন্দুবাবুকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে দল যদি জ্যোতির্ময়বাবুকে মন্ত্রী করত তা হলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।” এলাকার নতুন মন্ত্রীর কাছে ইতিমধ্যেই কেউ নতুন কলেজ, কেউ রাস্তা সংস্কারের আবেদন রেখেছেন। দলীয় এক কর্মীর কথায়, “কোনও শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, আমরা চাই এ বার এলাকায় কাজ হোক।” স্থানীয় বিজেপি নেতা আশিস দাস বলেন, “শিশির-শুভেন্দুর বিরোধী বলেই অন্য শিবির জ্যোতির্ময়বাবুকে মন্ত্রী করেছে। এলাকায় কাজ হলেই আমরা খুশি।” জনগণের স্বার্থে কাজ হলে জ্যোতির্ময়বাবুর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সিপিএমের পটাশপুর ২-এর লোকাল কমিটির সম্পাদক বলরাম মণ্ডলও।