খড়্গপুরে ডাকাতিরও অভিযোগ

সরকারি অফিসে রাতভর তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের

রেলশহর খড়্গপুরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। এ বার শহরের বুকে ইন্দায় সরকারি অফিসে গভীর রাতে চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাল ২১ জনের দুষ্কৃতী দল। অভিযোগ, তারপরে অফিসের অদূরে একটি বাড়ির লোকেদের আটকে রেখে নগদ ও সোনার গয়না মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘণ্টা দেড়েক পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। খড়্গপুরে একের পর এক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০০:৩০
Share:

দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের পরে লন্ডভন্ড বিদ্যুৎ দফতরের অফিস। বুধবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

রেলশহর খড়্গপুরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। এ বার শহরের বুকে ইন্দায় সরকারি অফিসে গভীর রাতে চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাল ২১ জনের দুষ্কৃতী দল। অভিযোগ, তারপরে অফিসের অদূরে একটি বাড়ির লোকেদের আটকে রেখে নগদ ও সোনার গয়না মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘণ্টা দেড়েক পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়।

Advertisement

খড়্গপুরে একের পর এক চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা। গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহরের ঝাপেটাপুরের বাড়িতে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী প্রৌঢ় চিত্ততোষ রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করেন, দুষ্কৃতীরা বাড়ি থেকে সোনা, নগদ টাকা-সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুঠ করে তাঁর স্বামীকে খুন করেছে। ঘটনার পর প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও ঘটনার কিনারা না হওয়ায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সরব মৃতের স্ত্রী। যদিও পুলিশের বক্তব্য, মৃতের ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন, ওই বাড়ি থেকে চুরির ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার হল না কেন?

প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। গত ৩ জানুয়ারি ভরদুপুরে ইন্দার বিদ্যাসাগরপুরে বাড়িতে ঢুকে প্রৌঢ়া স্মৃতি মুখোপাধ্যায়কে দুষ্কৃতীরা খুন করে পালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর দু’মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত সে ভাবে এগোয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত বছর শহরের পুরাতনবাজারে পরপর সাতটি দোকানে চুরি, মালঞ্চয় দুই রেলকর্মীর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনারও কিনারা হয়নি এখনও।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২টা নাগাদ গাড়ি করে ইন্দায় বিদ্যুৎ দফতরের বিভাগীয় অফিস শক্তিভবনে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, ভবনের দুই নিরাপত্তারক্ষী সন্তু দে ও সুব্রত মহাকুলকে বেঁধে রেখে বাড়ির দোতলায় চলে যায় তাঁরা। অভিযোগ, দোতলায় ভবনের তিন মেরামতির কর্মীকে বেঁধে রেখে অফিস জুড়ে তাণ্ডব চালায় তাঁরা। দফতরের বিভিন্ন ফাইল, নথিপত্রও লণ্ডভণ্ড করে দুষ্কৃতীরা। ভবনের নিরাপত্তা কর্মী সুব্রত মহাকুল ও মেরামতির কর্মী সঞ্জয় শাসমলের অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় প্রায় ২০-২১ জন ছিল। ওরা আমাদের সবাইকে বেঁধে রেখে রাত ১২টা থেকে প্রায় ৪টে পর্যন্ত অফিস জুড়ে তাণ্ডব চালায়। অফিসের ভল্ট ভাঙারও চেষ্টা করে ওরা।” তাঁদের দাবি, ওই বহুতল ভবনের তিনতলাতেও বিদ্যুৎ দফতরের অফিস রয়েছে। যদিও সেখানে দুষ্কৃতীরা যায়নি।

বুধবার ভোরে অফিসের নিরাপত্তারক্ষীরা বিদ্যুৎ দফতরের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুধীন চট্টোপাধ্যায়কে ঘটনার কথা জানান। সুধীনবাবুই পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই অফিস ও বাড়িতে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, এরপর দুষ্কৃতীরা কাছের একটি বাড়িতে হানা দেয়। বাড়ির মালিক মিলন সেনের দাবি, বাড়ির গেটে তালা লাগানো ছিল। দুষ্কৃতীরা বাড়ির পিছনে পাঁচিল টপকে ঢোকে বলে অনুমান। দুষ্কৃতীরা মিলনবাবুর বাড়ির পিছনের অংশে দোতলায় দুই ভাড়াটিয়া এগরার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কেশবচন্দ্র দাস ও মুর্শিদাবাদের কান্দির বাসিন্দা তমালকৃষ্ণ ঘোষের ঘরে হানা দেয়। কেশবচন্দ্রবাবুর পরিবারের লোকেদের দাবি, স্ত্রীকে নিয়ে কেশবচন্দ্রবাবু চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। এ দিন রাত তিনটে নাগাদ স্টেশন থেকে রিকশায় বাড়ি ফেরেন তিনি। স্ত্রীকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই কেশবচন্দ্রবাবু এগরার উদ্দেশে রওনা দেন। তারপরেই দুষ্কৃতীরা বাড়িতে হানা দেয় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীরা কেশবচন্দ্রবাবুর স্ত্রী কাজল দাস, তমালকৃষ্ণবাবু ও তাঁর স্ত্রী রুনুদেবীর হাত বেঁধে রেখে একটি ঘরে আটকে রাখে। রুনুদেবী বলেন, “আমার ছেলে কাঁদছিল। সেই সময়ে ওরা আমার হাত খুলে দিয়ে ছেলেকে সামলাতে বলে। আর এদিক-ওদিক করলে ছেলেটাকে কেটে ফেলবে বলে হুমকিও দেয়। পরে ওরা চলে গেলে আমি সকলের হাত খুলে দিই।” তমালকৃষ্ণবাবুরও অভিযোগ, “ওদের হাতে লোহার রড, সাইকেলের চেন, ভোজালি ছিল। আমরা ভয়ে চুপ করে ছিলাম। দুষ্কৃতীরা মুখে বলছিল যে ওরা পার্টির লোক।” কাজলদেবীরও অভিযোগ, “স্বামী বেরিয়ে যাওয়ার পরে একটু শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। সেই সময় ওরা ঢুকে আমাকে মারে। পিছমোড়া করে বেঁধে রেখে দিয়ে ডাকাতি করে পালায়।”

দুষ্কৃতীরা তমালকৃষ্ণবাবুর ঘর থেকে নগদ চার হাজার টাকা ও কেশবচন্দ্রবাবুর ঘর থেকে প্রায় চার ভরি সোনার গয়না নিয়ে পালায় বলে তাঁদের পরিবারের লোকেদের দাবি। ওই বাড়ির সামনের অংশে থাকেন মালিক মিলনবাবু। প্রশ্ন উঠছে, দুষ্কৃতীরা বাড়িতে হানা দিলেও মিলনবাবু ঘটনার কথা জানতে পারলেন না কেন? মিলনবাবুর দাবি, তিনি কোনও আওয়াজ পাননি। দুষ্কৃতীরা পালানোর পরে ওদের চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে। শক্তিভবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সৌমেন দাস বলেন, “আমাদের এই এলাকায় একাধিক সরকারি অফিস রয়েছে। অথচ পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না। রাতেও পুলিশ টহল দেয় না।” তাঁর দাবি, গত ৫০ বছরেও এমন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর থেকে উদ্বেগ বেড়ে গেল। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ সক্রিয় হোক।

বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে অফিসে আসি। প্রাথমিকভাবে দেখে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী খোওয়া যায়নি বলেই মনে হচ্ছে। তবে আমরা ফাইলপত্র খতিয়ে দেখছি। পুলিশও ঘটনার তদন্ত করছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি লুঠ করতেই ওই দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল। সেখানে কিছু না পেয়ে তাঁরা ওই বাড়িতে চড়াও হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ দফতরের অফিস থেকে কোনও নথি খোওয়া গিয়েছে কিনা অথবা দুষ্কৃতীরা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারি অফিসে হানা দিল, তদন্তে ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন