Suvendu Adhikari

শুভেন্দুর ইন্দ্রনীল-মন্তব্য নিয়ে তেতে সঙ্গীত মহল, রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি

গায়ক রূপঙ্কর বাগচি তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘সঙ্গীতমেলায় আমি যতবার পারফর্ম করেছি, কোনওবারই কেউ কাটমানি নেয়নি।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৩২
Share:

শুভেন্দু অধিকারী ও ইন্দ্রনীল সেন।

চন্দননগরে সার্কাস মাঠের জনসভায় রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের বিরুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য নিয়ে সরগরম শিল্পীমহল। গত মঙ্গলবার শুভেন্দু চন্দননগরে (ইন্দ্রনীল চন্দননগরের বিধায়ক) এক জনসভায় গিয়ে ইন্দ্রনীলের নাম না করে তাঁর বিরুদ্ধে গায়কগায়িকাদের থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। শুক্রবার থেকে সেই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেছেন গায়কগায়িকারা। শুভেন্দু ওই সভায় বলেছিলেন, ‘‘এখানকার যিনি ছিন্নমূল বিধায়ক, তিনি যখন যে পার্টি ক্ষমতায় থাকে, তাদের ধরে থাকেন। নন্দীগ্রামে আমরা যখন আন্দোলন করছিলাম, উনি বুদ্ধবাবুর (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) পিছনে ঘুরতেন। এখন তৃণমূলে। ইনি গায়ক-গায়িকাদের থেকে সঙ্গীতমেলায় কাটমানি নেন। আমাকে অনেক গায়ক-গায়িকা এ কথা বলেছেন।’’ যদিও শুভেন্দু কোনও গায়কগায়িকার নাম বলেননি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আপাতত শুভেন্দু-ইন্দ্রনীল চর্চায় উত্তাল।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক রূপঙ্কর বাগচি তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘সঙ্গীতমেলায় আমি যতবার পারফর্ম করেছি, কোনওবারই কেউ কাটমানি নেয়নি। আর ইন্দ্রনীল’দা আমার সিনিয়র মিউজিশিয়ান। ওঁর কাছ থেকে নানা সময়ে অনেক সঠিক পরামর্শ পেয়েছি’। ওই পোস্ট দেখে আনন্দবাজার ডিজিটাল রূপঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘২৫ বছর ধরে গানমেলায় গান গাইছি। বরাবর যোগ্য সাম্মানিক পেয়েছি। কেউ কাটমানি নেয়নি। আর শুভেন্দু অধিকারী নাম না করলেও উনি যে ইন্দ্রনীল সেনের উদ্দেশে ওই কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট। ইন্দ্রনীল সেন আমার সিনিয়র শিল্পী। যখনই গিয়েছি ওর কাছে সুপরামর্শ পেয়েছি।’’ রূপঙ্কর আরও জানান, তাঁর এই বক্তব্যের নিরিখে তাঁকে যদি কেউ ‘তৃণমূলকর্মী’ হিসাবে চিহ্নিতও করেন, তাহলে তা নিয়ে তাঁর কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। তিনি যে ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তি’ সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।

Advertisement

গায়ক মনোময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ইন্দ্রনীল সেন আমার অগ্রজ শিল্পী। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমি বলছি, সঙ্গীতমেলায় আমি বরাবর আমার পারিশ্রমিক পেয়েছি। ওঁর সম্পর্কে এই মন্তব্য ভুল।’’ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীরও বক্তব্য, অনেক ছোটবয়স থেকে তিনি গানমেলায় গান গাইছেন। সরকার বদল হয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার এসেছে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে উদ্যোক্তাদের ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন আসেনি। ইমনের কথায়, ‘‘২০১১ সালের পরেও আমি গানমেলা থেকে যোগ্য সম্মান আর পারিশ্রমিক পেয়েছি। আর ইন্দ্রনীল’দা শুধু শিল্পী নন। একজন ভাল মানুষও। সে পরিচয়ও বার বার পেয়েছি।’’

Advertisement

গায়ক সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্ট বলছে, ‘শুধু বাংলা সঙ্গীতমেলা নয়, রাজ্য সরকার এবং তার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের কোনও অনুষ্ঠানেই আজ অবধি কোনও কাটমানির এতটুকু আভাসও কেউ কখনও দেয়নি। বরং তারা সবসময় পরিচিত, কম পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত এবং নতুন— সমস্ত শিল্পীদের এবং যন্ত্রশিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করে। আমার সঙ্গে সমস্ত শিল্পীরা যে এই নিয়ে আমার সঙ্গে সহমত হবেন, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই’।

সঙ্গীতশিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়ও ফেসবুকে পোস্ট করে জানিয়েছেন, শিল্পীরা গানমেলায় কোনও ভাবেই কাটমানির শিকার হননি। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমিও আমার সাম্মানিক সময়মতোই পেয়েছি।’’ সঙ্গীতশিল্পী গার্গী ঘোষ একটি ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করে শুভেন্দুর মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গানমেলায় সমস্ত সঙ্গীতশিল্পীর অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কাটমানির প্রশ্নই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওই মন্তব্য অত্যন্ত কুরুচিকর। শুভেন্দু অধিকারী যদি প্রমাণ করতে না পারেন যে, ইন্দ্রনীল সেন কাটমানি নেন, তাহলে তাঁকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে। নয়তো শিল্পীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন