রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল ছবি।
আখ্যা দিয়েছেন নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। ব্যাখ্যা দিলেন তাঁর সেচমন্ত্রী।
কয়েক বছর আগে রাজ্যের বন্যাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ‘ম্যানমেড’। এ বারের বন্যা পরিস্থিতিকেও সেই তকমা দিয়েছেন তিনি। বন্যা কেন ‘ম্যানমেড’ বা মনুষ্যকৃত, রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার তার ব্যাখ্যা দেন বিধানসভায়। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি গড়ার পরিকল্পনা হলেও বর্তমানে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজটাই দেখছে। আর বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজটা গৌণ হয়ে পড়ায় রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজীববাবু।
এ দিন বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্ন ছিল, বিভিন্ন জলাধারের জল ছাড়ার জন্য ডিভিসি-র তরফে কি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে না?
সেচমন্ত্রী জানান, এই বিষয়ে কেন্দ্রকে বারবার চিঠি লেখা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর ব্যাখ্যা, সারা বছর জল ছাড়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য না-থাকায় বর্ষার মরসুমে চাপ বাড়তে থাকায় একসঙ্গে অনেক জল ছাড়া হয়। তার জেরে ভেসে যায় গাঙ্গেয় বঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এটা প্রাকৃতিক প্লাবন নয়, ‘ম্যানমেড’।
বারবার কেন এটা হচ্ছে, তার জবাবে রাজীববাবু মূলত চারটি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি জানান: l প্রয়োজনের তুলনায় বাঁধ কম। ডিভিসি গঠনের পরে সাতটি বাঁধ তৈরির কথা ছিল। কিন্তু গড়া হয়েছে পাঁচটি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে চারটি (কোনার, তিলাইয়া, পাঞ্চেত আর মাইথন) এবং একটি ঝাড়খণ্ডে (তেনুঘাট)। বেলপাহাড়ি আর বোকারোয় দু’টি বাঁধ তৈরির কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা গড়া যায়নি। l বাঁধ সংলগ্ন এলাকার অনেকটাই জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ফলে জলধারণ ক্ষমতা কমেছে বাঁধের। ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ ওই সব দখলদারকে সরাচ্ছেন না। l সংস্কারের অভাবে বাঁধে পলি জমে নাব্যতা কমে গিয়েছে। জলধারণের ক্ষমতা কমছে তাতেও। l আয় বাড়াতে জলবিদ্যুৎ তৈরির প্রবণতা। বিদ্যুৎ তৈরির তাগিদে বছরভর বাঁধে বেশি করে জল ধরে রাখা হয়। তার পরে বর্ষার মরসুমে যখন বৃষ্টি বাড়ে, তখন বাঁধ বাঁচানোর তাগিদে একসঙ্গে হুড়মুড়িয়ে অনেক জল ছাড়তে হয়। এই সব কারণেই বছরের পর বছর যখনই ভারী বৃষ্টি হয়, একসঙ্গে যথেচ্ছ জল ছাড়ে ডিভিসি। ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম। এ বারেও সেটাই হয়েছে। এটাই ম্যানমেড ফ্লাড, মনুষ্যকৃত বন্যা।
এ বছর তেনুঘাট বাঁধ সব চেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেচমন্ত্রী। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী ওই বাঁধে জল থাকা উচিত (গাইড কার্ভ) ৮২২ ফুট। কিন্তু এ বার সেখানে ৮৩৮ ফুট জল রাখা ছিল। অর্থাৎ ওই বাঁধে জলতলের বাড়তি উচ্চতা ছিল ১৬ ফুট। তার উপরে বৃষ্টির দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমা জলের পরিমাণ ও উচ্চতা বাড়তে থাকে। এমন একটা সময় আসে, যখন বাঁধ বাঁচাতে ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে অনেক বেশি
জল ছেড়ে দেন। সেচমন্ত্রীর বক্তব্য, বছরের অন্য সময়ে ১৬ ফুট বেশি উচ্চতায় জল ধরে না-রাখলে
বর্ষণের মরসুমে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। এর জেরে বন্যা হয়ে গেল বলেই এটা ‘ম্যানমেড’। মন্ত্রী জানান, পাঞ্চেতেও ছ’ফুটের বেশি উচ্চতায় জল ধরে রাখা হয় বছরভর। তা না-করে আগে থেকে একটু একটু করে জল ছেড়ে রাখলে এই সমস্যা হতো না বলে মনে করেন তিনি। রাজীববাবুর অভিযোগ, তেনুঘাট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিক বার চিঠি লেখা হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।