বিডিও-র কাছে গিয়ে বিয়ে রুখে দিল ছাত্রী

বাসস্টপে নেমেই শুরু লুকোচুরি। পনেরো বছরের স্কুলছাত্রী পালাচ্ছিল নিজের পিসির থেকে, যিনি তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। একে-তাকে জিজ্ঞাসা করে পাড়া ব্লক অফিসে পৌঁছে কিশোরী সোজা হাজির বিডিও-র কাছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পাড়া শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:১১
Share:

বাসস্টপে নেমেই শুরু লুকোচুরি। পনেরো বছরের স্কুলছাত্রী পালাচ্ছিল নিজের পিসির থেকে, যিনি তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। একে-তাকে জিজ্ঞাসা করে পাড়া ব্লক অফিসে পৌঁছে কিশোরী সোজা হাজির বিডিও-র কাছে। সঙ্গে আবেদন, ‘‘আমার বিয়ে ঠেকান। আমি পড়তে চাই। স্বাবলম্বী হতে চাই।’’ সোমবার পুরুলিয়া ২ ব্লকের জাহাজপুর গ্রামের ওই ছাত্রীর সব কথা শুনে বিডিও ডেকে পাঠান তার বাবা-মা, পিসি এবং পাত্রপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন বাবা-মা এবং পিসি। পণ বাবদ নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার মুচলেকা দিয়েছে পাত্রপক্ষ।

Advertisement

বীণা কালিন্দী, আফসানা খাতুনদের জেলা পুরুলিয়ায় বিয়ে রোখায় নাবালিকাদের এগিয়ে আসার ঘটনা নতুন নয়। তবে পরিবারের চাপ বরদাস্ত না করে এই নাবালিকা যে ভাবে কাঠখড় পুড়িয়ে বিয়ে রুখেছে, সে জেদকে কুর্নিশ জানাচ্ছে পাড়া ব্লক প্রশাসন। তাই পাড়া-র বাসিন্দা না হলেও আগামী ১৪ অগস্ট কন্যাশ্রী দিবসে ব্লকের তরফে তাকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বড়শিনি নন্দলাল হাইস্কুলের কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত কেন্দ্রে নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তার বাবা চাষ করেন। পাড়া থানার পাথরকুচি গ্রামে থাকেন তার পিসি। তিনিই গুড়গুড়িয়া গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে ভাইঝির বিয়ে ঠিক করেন। সদ্য আঠারোয় পা রাখা ছেলের পরিবার এসে মেয়েকে আশীর্বাদ করে যায়। ২৬ জুলাই ছিল বিয়ের দিন।

Advertisement

আশীর্বাদের আগে থেকেই বেঁকে বসেছিল মেয়েটি। পরিবারের চাপে আশীর্বাদ-পর্ব অবধি চুপ থাকলেও, এক বন্ধুর সূত্রে ‘চাইল্ড লাইন’-এর নম্বর জোগাড় করে সমস্যা জানায়। ‘চাইল্ড লাইন’-এর কর্মীরা মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মা-কে বিয়ে বন্ধ করার জন্য বোঝান। মেয়েটির কথায়, ‘‘বাবা-মা তাতে নরম হয়েছিল। কিন্তু খবর পেয়ে পিসি বলতে থাকেন, ‘বাড়িতে কে এসে বিয়েতে বাধা দেবে! তার চেয়ে তুই আমার সঙ্গে আমার শ্বশুরবাড়িতে চল। বিয়ে পর্যন্ত ওখানেই থাকবি’। তখনই ঠিক করি যে করে হোক বিয়ে আটকাব।’’

বিডিও সমীরণ বারিক বলেন, ‘‘মেয়েটার জেদ অবাক করার মতো। ওর কথা শুনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে আইনিদিকটা বুঝিয়ে আপাতত বিয়ের ব্যাপারে নিরস্ত করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন