‘মন কি বাত’ শুনেছেন মোদী, দশ শিক্ষক স্কুলে

মনের কথা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী! অভিভাবিকাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ফরাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের হাল হকিকত আগেই জেনেছিল তাঁর দফতর। স্কুলের সঙ্কট কাটাতে আপাতত ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিল কেন্দ্র।

Advertisement

বিমান হাজরা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

এই স্কুলেই শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ এসেছে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

মনের কথা শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী!

Advertisement

অভিভাবিকাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ফরাক্কা ব্যারাজ প্রজেক্ট উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের হাল হকিকত আগেই জেনেছিল তাঁর দফতর। স্কুলের সঙ্কট কাটাতে আপাতত ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিল কেন্দ্র।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক থেকে সেই নির্দেশ ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজারের সৌমিত্রকুমার হালদারের দফতরে এসে পৌঁছেছে। সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। অবশেষে চুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ এসেছে।’’ গ্রীষ্মের ছুটি থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য চিঠি হাতে পাননি। স্কুলের অধ্যক্ষ মনোজকুমার পানি জানান, ১১ জুন স্কুল খোলার পরেই এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।

Advertisement

গত বছর অক্টোবর থেকে দেশের মানুষের আর্জি নিয়ে প্রতি মাসে এক বার রেডিওয় কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানের নাম ‘মন কি বাত’। মাস তিনেক আগে ফরাক্কার স্কুলটির দুরবস্থার কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ৭২ জন অভিভাবিকা। তার পরেই জেনারেল ম্যানেজারের কাছে স্কুলের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ চেয়ে পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর।

কী অবস্থা স্কুলটির?

১৯৬৫ সালে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির সময়ে কর্মীদের ছেলেমেয়েদের জন্য এই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় চালু করে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক। মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণে এনে সেটিকে অনুমোদন দেয় রাজ্য। এক সময়ে মুর্শিদাবাদের অন্যতম নামী স্কুল ছিল সেটি। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় গত কয়েক বছর ধরে স্কুলটির হাল খারাপ হতে শুরু করে। শুরুতে ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষক থাকলেও তা কমতে-কমতে ১৩ জনে দাঁড়ায়। বিজ্ঞান বিভাগের সব গবেষণাগার প্রায় বন্ধ। জীববিদ্যা, অঙ্ক, বাংলার শিক্ষক নেই। ইংরেজির শিক্ষক না থাকায় ক্লাস নিতে হয় অধ্যক্ষকেই।

প্রাথমিক বিভাগের অবস্থাও সেই রকমই। চার শিক্ষকের মধ্যে দু’জন অবসর নেবেন কয়েক মাসের মধ্যেই। তাই এ বছর প্রথম শ্রেণিতে কোনও ছাত্র ভর্তি করা হয়নি। বছর পাঁচেক আগেও স্কুলের মোট পড়ুয়া ছিল প্রায় তিন হাজার। তা কমতে কমতে এখন ১১০০। ব্যারাজ কর্মীদের ছেলেমেয়ে ছাড়াও স্থানীয় বহু ছেলেমেয়ে এখানে পড়ে। কিন্তু কর্মীদের ছেলেমেয়ে কমে যাওয়ায় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর এই স্কুল নিয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছিল না বলে অভিযোগ। শিক্ষক বা কর্মী নিয়োগও বন্ধ ছিল। কর্তৃপক্ষ স্কুলের দুরবস্থার কথা জানিয়ে একাধিক বার দিল্লিতে চিঠি পঠিয়েছিলেন। তাতে কোনও ফল হয়নি।

মোড় ঘুরে যায় গত মার্চে।

এক দিন রেডিওয় ‘মন কি বাত অনুষ্ঠানটি শোনেন গীতিকা চক্রবর্তী, পুতুল পানির মতো বেশ কয়েক জন অভিভাবিকা। তার পরেই সকলে মিলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত। পুতুলদেবী স্কুলের অধ্যক্ষের স্ত্রী। তাঁর দুই ছেলেও সেখানে পড়ে। তাঁদের একটাই স্বস্তি, ‘‘আমাদের কথা যে প্রধানমন্ত্রীর মন ছুঁয়েছে সেটা ভাবতেই ভাল লাগছে।” উচ্ছ্বসিত স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হরিশ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমি যা পারিনি তা পেরেছেন অভিভাবিকারা। ওঁরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি না লিখলে এমনটা কিছুতেই সম্ভব হত না।’’

দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে ‘স্কুল বাঁচাও কমিটি’। তার আহ্বায়ক অক্ষয় সরকার বলেন, ‘‘জানুয়ারিকে শিক্ষাবর্ষ ধরে ছ’মাসের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগের চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, পরে ওই মেয়াদ বাড়ানো হবে। আরও ১০ জন শিক্ষক দরকার। না হলে সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না।’’

সে তো পরের কথা।

প্রধানমন্ত্রী মনের কথা শোনায় আপাতত ফুর্তিতে ফরাক্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন