শপথের আগে মোদীময় কালীঘাট 

শ্যামলবাবু অবশ্য সম্প্রতি মা গত হয়েছিলেন বলে মন্দিরে ঢুকলেন না। তবে কোথা থেকে ডালা নিতে হবে, ডালাওয়ালাকে তিনিই দেখিয়ে দিলেন। ডালায় পেঁড়া-নারকোলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ছবিও ঠাঁই পেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

কালীঘাটে পুজো দিতে আসার পথে। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ভোটের আগে এ রাজ্যে তাঁর শেষ বক্তৃতায় ‘জয় শ্রী রাম’ আর ‘জয় মা কালী’-ধ্বনিতে ফারাক নেই বলে সরব হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি দ্বিতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনে খোদ কলকাত্তাওয়ালি ‘মা কালী’র কালীঘাট মন্দিরেও ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি উঠল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। গেরুয়া টি-শার্টধারী প্রাক্তন সেনাকর্মী তথা হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক গৌতম করকে কালীঘাট-চত্বরে দেখা গেল জনা পাঁচেকের একটি দলের সঙ্গে। পুরনো আরএসএস কর্মী শ্যামল বণিকও তাঁদের সঙ্গী। শ্যামলবাবু অবশ্য সম্প্রতি মা গত হয়েছিলেন বলে মন্দিরে ঢুকলেন না। তবে কোথা থেকে ডালা নিতে হবে, ডালাওয়ালাকে তিনিই দেখিয়ে দিলেন। ডালায় পেঁড়া-নারকোলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ছবিও ঠাঁই পেল। গলায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি ঝুলিয়ে মোদীজির ছবি-সংবলিত ডালা হাতে মন্দিরে প্রবেশ করলেন গৌতমবাবু। ডালা অর্পণ করে নিজেদের নামগোত্র বলে পুজো দেওয়ার সময়ে মা কালীর সামনে ‘জয় শ্রী রাম’ বলে হাঁক দিলেন।

কিন্তু মা কালীর সামনে ‘জয় শ্রী রাম’-ধ্বনি বলা হল কোন যুক্তিতে? গৌতমবাবুর সঙ্গে মন্দিরগামী সুদীপ্তা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমরা তো রামঠাকুরেরও ভক্ত! সব ঠাকুরই এক।’’ কালীঘাট চত্বরে রামধ্বনিটি যে ইদানীং তত অচেনা নয় তা বার বার বলছিলেন দু’জন পান্ডা লালন তিওয়ারি, অভিজিৎ চক্রবর্তীরা। তাঁদেরও যুক্তি, কালীঘাট মন্দিরের বাইরেই তো বজরঙ্গবলিও রয়েছেন। কে কী বলল, কী আসে যায়! সব ঠাকুরই এক!

Advertisement

তবে কালীঘাট মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ হালদারও মন্দিরে ‘জয় শ্রী রাম’-ধ্বনি নিয়ে স্তম্ভিত। বলছেন, ‘‘এমন কিন্তু সত্যি আগে শুনিনি! জয় শ্রী রাম স্লোগানটাও তো রাজনৈতিক স্লোগানেই পরিণত হয়েছে। অদ্ভূত ব্যাপার!’’ তবে ভোটে দাঁড়ানোর পরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাগজ কালীঘাটে মায়ের পায়ে ঠেকানোর রেওয়াজ বহু পুরনো! বিভিন্ন দলের প্রার্থীরাই আসেন। এ বারও কলকাতা দক্ষিণ-এর তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়, বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুদের ঢুকতে দেখেছেন বিদ্যুৎবাবু। মোদীর ছবি নিয়ে ডালা অর্পণের বিষয়টিও কালীঘাটের প্রবীণ সেবায়েতের কাছে কিছুটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা। ‘‘রাজনৈতিক দলের ভক্তরা তো মন্দিরে আসেনই, কিন্তু ডালায় নেতার ছবি নিয়ে পুজো দেওয়াটা খানিক বিরল। কারওর হয়ে মায়ের আশীর্বাদ চাইলে তো তাঁর নামগোত্র বললেই হয়!’’— বলছেন বিদ্যুৎবাবু।

লেক কালীবাড়ির সেবায়েত নিতাইচন্দ্র বসু আবার বলছিলেন, ‘‘আমরা সাধারণত কোনও নেতার ছবি নিয়ে ঢোকার অনুমতি দিই না। তবে কারও নাম করে কেউ পুজো দিলে কিছু বলার নেই।’’ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অন্যতম অছি কুশল চৌধুরীও বলছেন, ‘‘ভোটের আগে-পিছেও নেতাদের আনাগোনা লেগেই থাকে। অনেকেই আগাম খবর দিয়েও আসেন। আমাদের কাছে সবাই ভক্ত। ভক্তের ফারাক হয় না।’’ কালীঘাট-চত্বরে দাঁড়িয়েই শ্যামলবাবু, গৌতমবাবুরা এ দিন বলছিলেন, ‘‘ভোটের ফলপ্রকাশের আগের সকালেও কিন্তু আমরা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মায়ের পুজো দিয়ে এসেছিলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন