ছবি রয়টার্স।
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ডাক এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দিল্লি গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তিন এবং ঝাড়গ্রামের বিজেপির তিন পরিবারের সদস্যেরা। গেরুয়া শিবিরের দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণে ডাকা হয়েছে।
বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে এখনও পর্যন্ত আমাদের জেলায় দলের তিনজন কর্মী খুন হয়েছেন। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে। শহিদ পরিবারগুলোর সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তাঁরা দিল্লি গিয়েছেন।’’
দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান রয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছাতেই ওই পরিবারগুলিকে ডাকা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসেও তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব হয়েছেন মোদী। ভোটে জয়ের পরেও তাঁর মুখে তৃণমূলের সন্ত্রাসের নালিশ শোনা গিয়েছে। জেলা বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘ভোটের আগে- পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বাংলায় সন্ত্রাসের অভিযোগ শোনা গিয়েছে। এতে দলের কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছেন।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, কেশিয়াড়ির ঘৃতগ্রামের মনু হাঁসদার স্ত্রী মালতী হাঁসদা, ছেলে গণেশ হাঁসদা, দাঁতনের কাঁটাপালের বিপিন দাসের ছেলে সুবল দাস, বোনপো নবকুমার সাউ দিল্লি গিয়েছেন। আর গিয়েছেন গোয়ালতোড়ের মাকলির বাহাদুর মুর্মুর ছেলে দেবাশিস মুর্মু, ভাইপো বিকাশ মুর্মু। মনু, বিপিন, বাহাদুরের খুন নিয়ে এক সময়ে উত্তাল হয়েছে জেলার রাজনীতি। মঙ্গলবার রাতে ওই ছ’জন মেদিনীপুরে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাঁদের অভ্যর্থনা জানান দলের জেলা সভাপতি শমিত। মেদিনীপুর থেকে তাঁরা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। পরে হাওড়া থেকে দিল্লির ট্রেন ধরেন।
এ বিষয়ে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির অবশ্য দাবি, ‘‘বিজেপি কর্মীদের মৃত্যুর সঙ্গে দলের কেউ জড়িত নয়। মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করছে বিজেপি।’’ দলের এক সূত্রে খবর, রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এসেও ওই পরিবারগুলোর সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন মোদী। কী বলছেন ওই পরিবারের সদস্যরা? সুবল দাস, গণেশ হাঁসদারা বলেন, ‘‘বিজেপি যে সম্মান দিয়েছে তা ভুলব না। খুনের যেন বিচার পাই।’’
ঝাড়গ্রাম থেকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন নিহত মাতাল দিগার, রামপদ বেরা ও ধবনী গ্রামের রমেন সিংয়ের পরিবারের সদস্যেরা। এবার ঝাড়গ্রামে লোকসভা ভোটের আগের রাতে ১১ মে বাড়ির কাছেই মৃত্যু হয় বিজেপির জুনশোলা বুথের সহ সভাপতি রমেন সিংয়ের। খুনের অভিযোগে মামলা রুজু হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও র্যালির উপর হামলায় নিহত হন বিজেপি কর্মী মাতাল দিগার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভামাল গ্রামে খুন হন ভামাল বুথের সহ সভাপতি রামপদ বেরা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তারা তা অস্বীকার করেছে। নিহত কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের এদিন গাড়িতে হাওড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ট্রেনে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তাঁরা।
ধবনী গ্রামের নিহত কর্মী রমেন সিংয়ের স্ত্রী বাসন্তী তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে সুমনকে নিয়ে দিল্লি যাচ্ছেন। বাসন্তী বলেন, ‘‘মোদীজি আমাদের এমন সম্মান দেবেন, ভাবতেই পারিনি।’’