বালাই নেই দেখভালের। মাইতিপাড়ার সেতুর রাস্তার এখানকার দশা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
কোথাও রাস্তায় বড় বড় গর্ত। পিচ উঠে ঢালাইয়ের লোহা উঁকি মারছে। সেই গর্তে মালবাহী লরির চাকা পড়ে অহরহ ‘অ্যাক্সেল’ ভাঙছে। কোথাও আবার রেল ওভারব্রিজের আলো জ্বলে না। যার সুযোগে অসামাজিক কাজকর্মেরও বাড়বাড়ন্ত। সন্ধ্যার পর মহিলারা পারতপক্ষে সে পথ মাড়ান না। ঘুরপথে যাতায়াত করেন।
মগরায় রবিবার নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে পড়ে। বরাত জোরে কারও প্রাণহানি হয়নি। তবে তা কলকাতার বড়বাজারে সেতু ভেঙে প্রাণহানির ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নির্মীয়মাণ সেতুই যেখানে ভেঙে পড়ছে সেখানে জেলায় চালু রেলসেতুগুলির হাল নিয়ে।
অভিযোগ, ডানকুনির বালি লাগোয়া মাইতিপাড়া বা শ্রীরামপুরের মতো ব্যস্ত মহকুমা শহরে উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ এতটাই গা ছাড়া, যে কোনও সময়ই বড় অঘটন ঘটতে পারে। মাইতিপাড়ায় রেল সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন একাধিক নেতা, মন্ত্রীদের কনভয় যাতায়াত করে। ফলে মাইতি পাড়ায় রেল ওভারব্রিজের করুণ অবস্থা নেতা-মন্ত্রী বা প্রশাসকদের চোখ এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়।
পুলিশের এক কর্তা বলেন,‘‘আমরা সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারে বারেই চিঠি লিখি। কেন না দুর্ঘটনা ঘটলে দায় এসে পড়ে পুলিশের উপরই। কিন্তু তাতেও টনক নড়ে না কর্তাদের।’’ ওই সেতু দিয়ে যাতায়াতের পথে দেখা যেত এই সেদিনও সেতুর ভাঙা অংশে বাঁশ বেধে আড়াল করা থাকত। যাতে সেই ফাঁক বেয়ে কেউ গলে না রেল লাইনের উপর পড়েন। ওই সেতুর নীচে ডানকুনি কর্ড শাখা। কিছুদিন হল ওই সেতুতে সিমেন্ট-বালির প্রলেপ পড়তে শুরু করেছে। সড়ক পরিবহণ দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন,‘‘সেতু সারানোর কাজ হলেও রাস্তার কাজ হয়নি। তাতে গাড়ির যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমননিই চাকার সংঘর্ষে সেতুর স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। তাই রাস্তা এখনই সারানো জরুরি।’’
হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ রেল ওভারব্রিজ রয়েছে শ্রীরামপুরে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ২৫ বছর আগে ওই সেতু উদ্বোধন করেন। তারপর সেতু দিয়ে গাড়ি চলাতলের সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু পূর্ত দফতরের রক্ষণাবেক্ষণের ছবিটা কেমন? সেতুর নীচে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। নিত্য সেখানে বহু মানুষের যাতায়াত। কিছুদিন আগেই এক ব্যবসায়ীর গা-ঘেঁষে পড়ে একটি সিমেন্টের চাঙড়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তিনি।
আর সেতুর উপরের ছবিটা? জিটি রোড ধরে বটতলা পেরিয়ে সেতুতে একটি মাত্র আলো টিমটিম করে জ্বলে। পুরো সেতু অন্ধকারে ঢাকা। জেলা পূর্ত দফতরের এক কর্তা অবশ্য আশ্বস্ত করেন, ‘‘আমরা পুরো বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
আশ্বাস কতটা ভরসা জোগাবে তা ভবিয্যৎই বলবে।