কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

তোলাবাজিতে নাম জড়াল মন্ত্রীর ভাইয়ের, বন্ধ বাস

‘তোলাবাজ’ এবং ‘কাউন্সিলর’— তাঁর দলের ক্ষেত্রে এই দু’টি শব্দ যে সমার্থক হতে পারে না, নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে বারবারই সে বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকের ঠিক আগেই তোলাবাজিতে নাম জড়াল জেলারই এক তৃণমূল কাউন্সিলরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। ছবি: বিকাশ মশান।

‘তোলাবাজ’ এবং ‘কাউন্সিলর’— তাঁর দলের ক্ষেত্রে এই দু’টি শব্দ যে সমার্থক হতে পারে না, নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে বারবারই সে বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকের ঠিক আগেই তোলাবাজিতে নাম জড়াল জেলারই এক তৃণমূল কাউন্সিলরের। আসানসোলের সেই পুরপিতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটকের ‘দলবলের’ বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলে মিনিবাস বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করল দলেরই একাংশ।

Advertisement

আসানসোলে বাসকর্মীদের কাছ থেকে অভিজিৎবাবুর অনুগামীরা তোলা তুলছে, এ দিন এই অভিযোগে সরব হন তৃণমূলের পরিবহণ-কর্মী সংগঠনের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া। প্রতিবাদ করায় জুটেছে খুনের হুমকি, এই অভিযোগে মিনিবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিজিৎবাবুর দাবি, ‘‘মিথ্যে অভিযোগ।’’ মন্ত্রী মলয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘সারা দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বর্ধমানে ছিলাম। কী ঘটেছে, আসানসোলে গিয়ে খোঁজ নেব।’’

তোলাবাজি থেকে মারধর, এমনকী, তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় দলেরই কর্মীকে খুনের চেষ্টা— ইদানীং রাজ্যে এমন সব অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের কাউন্সিলরদের। তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বিধাননগরের অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। দলেরই কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ হয়েছে কামারহাটির কাউন্সিলর অজিতা ঘোষের বিরুদ্ধে। এ দিন বর্ধমানের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ফের বার্তা দেন, ‘‘কাউন্সিলরদের এলাকার কাজ করতে হবে। তা না করে যে কাউন্সিলরেরা অন্য দিকে মন দেবে, তাদের দলও রেয়াত করবে না, সরকারও করবে না।’’

Advertisement

সম্প্রতি দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে রাজুবাবু অভিযোগ জানান, আসানসোল স্ট্যান্ডে বাসের ছাদে পণ্য তুললেই বাসকর্মীদের কাছ থেকে মোটা টাকা তোলা চাইছেন কাউন্সিলর অভিজিৎবাবুর কিছু অনুগামী। শুধু তাই নয়, স্ট্যান্ডে ঢোকা-বেরনোর সময়েও প্রতিটি বাসের কাছে টাকা নেওয়া হচ্ছে। রাজুবাবুর অভিযোগ, ‘‘দলকে এই অভিযোগ জানানোর পর থেকে আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি বাসস্ট্যান্ডে গেলে অভিজিতের ঘনিষ্ঠ সাজাদ আনসারি-সহ কয়েকজন এসে হুমকি দেয়, বেশি মুখ খুললে গুলি করে মেরে দেবে।’’

বন্ধ রইল মিনিবাস। শুক্রবার আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

রাজুবাবুর দাবি, থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। তাই বিষয়টি জানিয়ে দলের জেলা নেতৃত্ব ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ভোর থেকে আসানসোলে মিনিবাস বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাসকর্মীরা। শেষে আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির হস্তক্ষেপে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বাস চালু হয়। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি ( সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ না নেওয়ার কথা জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।’’

তিনি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন দাবি করে কাউন্সিলর অভিজিৎবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রাজুবাবু দীর্ঘদিন ধরেই বাসস্ট্যান্ডে নানা অনিয়ম করছেন। তাঁকে পরিবহণ কর্মী ইউনিয়নের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা। তাই তিনি মিথ্যে অভিযোগ তুলে দলের বদনাম করার চক্রান্ত করছেন। মন্ত্রী (মলয়বাবু) সব জানেন।’’ ‘অনিয়ম’ করার অভিযোগ আবার উড়িয়ে দিয়েছেন রাজুবাবু।

কার্যকারণ যা-ই হোক, গোটা ঘটনায় অস্বস্তি লুকোননি তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। তিনি বলেন, ‘‘বারবার এমন বিবাদ প্রকাশ্যে আসা ঠিক নয়। রবিবার এ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। হুমকি বরদাস্ত করা হবে না। কারা জড়িত, তদন্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন