বৃষ্টির আনন্দে। কলকাতায় রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
বরষা জাগ্রত দ্বারে। তার আগমনের সম্ভাবনায় কেউই কুণ্ঠিত নয়। কিন্তু সে নিজেই যেন কিছুটা কুণ্ঠিত। দোরগোড়ায় এসে তাই থমকে রয়েছে। দ্বার-বঙ্গের চৌকাঠ ডিঙিয়ে রবিবারেও তার পা পড়ল না গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। অথচ আদৌ অবাঞ্ছিত অতিথি নয় সে। বরং দহনক্লিষ্ট দক্ষিণবঙ্গ এই মুহূর্তে যার প্রত্যাশায় সারা দিন সারা রাত পথ চেয়ে বসে আছে, সে ওই বর্ষাই।
কিন্তু কীসের কুণ্ঠা বর্ষার? আগমনের আগেই যে জয় করে নিয়েছে বাঙালির মন, শেষ বেলায় তার দ্বিধা যাচ্ছে না কেন? অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে বলেই কি বাংলার উঠোনে ঢুকতে তার পা সরছে না?
হাওয়া অফিস মৌসুমি বায়ুর এই দোলাচলের, এই ‘ঢুকব কি ঢুকব না’র কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে না। তবে আবহবিদদের আশ্বাস, বর্ষার এই কুণ্ঠা নিতান্তই সাময়িক। সমস্ত সংশয় ঠেলে যে-কোনও সময়েই বাংলার দরজা খুলে সে বলে উঠতে পারে, ‘এই তো এসেই গেলাম!’
কীসের ভিত্তিতে এতটা আশা ও আশ্বাস দিচ্ছেন আবহবিদেরা? হাজিরার নির্ঘণ্ট তো কবেই উপেক্ষা করেছে মৌসুমি বায়ু! কীসের জোরে তার খামখেয়ালে ভরসা রাখা যাবে?
আবহবিদেরা বলছেন, পটভূমি প্রস্তুত। ‘এল নিনো’ বা দুষ্টু ছেলের (সাগরজলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি) দৌরাত্ম্যে এ বার সূচনাতেই বর্ষার দেরি হয়ে গিয়েছে অনেকটা। তার পরে পরেই আরব সাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘আশোবা’ মৌসুমি বায়ুর ঝুঁটি ধরে মোক্ষম টান দিচ্ছিল। তাতে আরও কিছুটা দেরি হয়েছে তার।
অবশেষে বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা উপকূলে বর্ষার ‘ভগীরথ’ হয়ে দেখা দেয় ঘূর্ণাবর্ত। তার দৌত্যেই বর্ষা যে বাংলার প্রতি প্রসন্ন হয়েছে, নানা ভাবে তার প্রমাণও দিচ্ছে মৌসুমি বায়ু। তাই তার মেজাজমর্জির উপরে আস্থা রাখা অমূলক হবে না বলে মনে করছেন আবহ-বিশেষজ্ঞেরা। রবিবার দুপুর থেকেই বর্ষার প্রসন্ন মেজাজটা ধরাও পড়ছে। বৃষ্টি নেমেছে মাঝেমধ্যে। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা সমাগমের পরিস্থিতি যে অনুকূল, তার প্রমাণ আকাশে, বাতাসে। দক্ষিণবঙ্গের কাছে বর্ষা পৌঁছতেই তার গতিবিধির উপরে নজর রাখতে উপগ্রহ-চিত্রে চোখ রেখে বসে আছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আবহবিদেরা। সেই উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করেই এ দিন তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু পুরো মাত্রায় সক্রিয় রয়েছে। লাগোয়া বাংলাদেশেও ঢুকে পড়েছে সে।
ও-পার বাংলায় না-হয় আগেই পা রাখল। কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঠিক কবে ঢুকবে মৌসুমি বায়ু?
আজ, সোমবারেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা সমাগমের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, বলছেন আবহবিদেরা। খাস কলকাতায় জল না-জমলেও ইতস্তত বৃষ্টি নামিয়ে সেই ইঙ্গিত দিয়েছে মৌসুমি বায়ু। শহরতলির কিছু কিছু জায়গায় জল জমে যাওয়ার খবরও মিলেছে। বিশেষত বাগুইআটির সাহাপাড়া-সহ একাধিক জায়গায় অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুডোবা জল জমে যায়। তা নামতে নামতে রাত ৯টা হয়ে যায় বলে জানান বাসিন্দারা। তাতে অসুবিধা যতই হোক, শেষ পর্যন্ত বর্ষা আসছে জ্বালা জুড়োতে, এই আশ্বাসেই খুশি নগরবাসী। তাঁদের থেকে কিছু কম আশ্বস্ত নয় হাওয়া অফিস। যাকে তারা এ বার বর্ষার ভগীরথ ঠাউরেছেন, সেই ঘূর্ণাবর্ত হতাশ করেনি। অমোঘ আকর্ষণে বাংলার দরজায় অন্তত বর্ষাকে পৌঁছে দিয়েছে সে। আর একটা টানে সে-ই চৌকাঠটুকু পার করিয়ে দেবে, এই আশায় আছে গাঙ্গেয় বঙ্গ।