বৃষ্টিতে রক্তচক্ষু রোগব্যাধিরও

ছুটির বিকেলে শোভাবাজারের ক্যাফেতে সেই সবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছেন উত্তর কলকাতার যুবক। এমন সময় বেজে উঠল মোবাইল। হোয়াটসঅ্যাপে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন তাঁর স্ত্রী: ‘‘বৃষ্টিতে ভিজো না। দিন কয়েক আগেই জ্বর থেকে উঠেছ। ফের কাশি শুরু হবে কিন্তু!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০৫:০৫
Share:

বৃষ্টি নামার আগে ফিরতে হচ্ছে ফেরিওয়ালাকে। রবিবার কলকাতার ধর্মতলার কাছে। ছবি: সুমন বল্ল

ছুটির বিকেলে শোভাবাজারের ক্যাফেতে সেই সবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছেন উত্তর কলকাতার যুবক। এমন সময় বেজে উঠল মোবাইল। হোয়াটসঅ্যাপে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন তাঁর স্ত্রী: ‘‘বৃষ্টিতে ভিজো না। দিন কয়েক আগেই জ্বর থেকে উঠেছ। ফের কাশি শুরু হবে কিন্তু!’’

Advertisement

সন্ধ্যায় কলেজের পুরনো বন্ধুদের দেখা করার কথা। রবিবার বিকেলে মেঘ জমতেই শুরু হল মেসেজ চালাচালি: ‘‘বৃষ্টি হওয়াটা মন্দ নয়। কিন্তু বেছে বেছে এ দিনই হতে হল!’’

চৈত্রের ফুটিফাটা গরম বলতে যা বোঝায়, এ বার এখনও তা পড়েনি। তাই এ দিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি কমবেশি মিললেও তা নিয়ে সমাদরের বাড়াবাড়ি তেমন ছিল না। বরং বিকেল-সন্ধ্যায় ছুটি উদ্‌যাপনের পরিকল্পনা হোঁচট খাওয়ায় অনেকেই বিমর্ষ! তার চেয়েও অনেকে বেশি চিন্তিত সম্ভাব্য রোগবালাই নিয়ে।

Advertisement

শীতের শেষ থেকে আবহাওয়ার খেয়ালিপনার সঙ্গে তাল মেলাতে নাজেহাল মানুষ। কয়েক দিন আগেও সকালে গায়ে দিতে হয়েছে চাদর। তার পরে তাপমাত্রা বাড়ে কিছুটা। এ বার মেঘ-বৃষ্টি। ঘরে-ঘরে সর্দিজ্বর। বসন্ত, হাম, ভাইরাস-জ্বর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের অস্থির আবহাওয়ায় জীবাণুদের সক্রিয়তা বাড়ে। মানুষের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ঠিক বিপরীত। অস্থির আবহাওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে সহজেই কাবু করে ফেলে রোগজীবাণু। তাই এমনিতেই যাঁরা কোনও অসুখে ভুগছেন, তাঁদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন আবহবিদেরা। সাবধানে রাখতে হবে শিশু-প্রবীণদেরও।

বৃষ্টি যে হতে পারে, তার পূর্বাভাস অবশ্য দিন দুয়েক আগেই দিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এ দিন দুপুর থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। এবং বিকেল গড়ানোর আগেই বৃষ্টি শুরু হয় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সন্ধ্যায় কলকাতা এবং লাগোয়া শহরতলিতেও বৃষ্টি হয়েছে কমবেশি। দিঘা থেকে জোরালো শিলাবৃষ্টির খবর এসেছে। বিকেল-সন্ধ্যার জোরালো বৃষ্টিতে রাতের তাপমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে যায়।

এই বৃষ্টির কারণ কী?

আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার টানে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকছে। এই জোলো হাওয়ার রমরমাই বৃষ্টির মূল কারণ।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস এ দিন জানান, জোলো হাওয়া গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছে। বৃষ্টি নেমেছে তা থেকেই। উপকূলবর্তী এলাকায় বৃষ্টির দাপট ছিল বেশি। কেননা উপকূল-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় পরের পর বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল, রেডার চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান আবহবিদেরা।

শীতের মরসুমে এ বার ঠান্ডা মেলেনি বললেই চলে। আবার ভরা মার্চেও তেমন গরম পড়েনি। বরং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠাই পেরোচ্ছে না। হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ ভাবে মার্চ থেকেই তাপমাত্রা ক্রমশ স্বাভাবিকের উপরে উঠতে থাকে। বাড়তে থাকে অস্বস্তি। এ ভাবেই তৈরি হয় কালবৈশাখীর পটভূমি। এ বার এমন হাল কেন?

আবহবিদদের অনেকে জানাচ্ছেন, এ বার বঙ্গোপসাগর থেকে লাগাতার জোলো হাওয়া ঢুকছে। মেঘ তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টিও নামছে। তাই তাপমাত্রা সে-ভাবে বাড়তে পারছে না। পশ্চিম থেকে গরম হাওয়াও এখনও সে-ভাবে ঢুকতে শুরু করেনি।

এই স্বস্তি ক’দিন থাকবে?

বেশ কিছু দিন স্বস্তি ভোগ করা যাবে, এমন আশ্বাস দিতে পারছেন না আবহবিজ্ঞানীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন