কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
স্কুলপড়ুয়া ছেলে ক্যারাটে খেলায় ভাল। ক্যারাটের অনেক প্রতিযোগিতায় সে জয়ী হয়েছে। এ বার ছেলে বিদেশ যাবে ক্যারাটে খেলতে। জাপানে ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা তার। কিন্তু বাদ সাধছে পাসপোর্ট। পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশ যাওয়া সম্ভব নয়। একাধিক বার আবেদন করেও ছেলের পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেননি মা। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বাবার সই এবং উপস্থিতি ছাড়া নাবালক সন্তানকে পাসপোর্ট দেওয়া যাবে না। উপায় না দেখে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামীবিচ্ছিন্না মা। তাঁর আবেদন, ছেলেকে জাপানে খেলতে যাওয়ার সুযোগ করে দিক আদালত। তাকে পাসপোর্ট দেওয়া হোক। বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরী। আগামী সোমবার ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১১ সালে বিয়ে হয় ব্যারাকপুরের ওই দম্পতির। ২০১৫ সালে তাঁদের পুত্রসন্তান হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে ২০১৯ সাল থেকে তাঁরা আলাদা থাকছেন। পরে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের হয়। সম্প্রতি তাঁদের নাবালক সন্তানকে জাপানে ক্যারাটে খেলতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল। স্কুলের তরফে মায়ের কাছে ছেলের পাসপোর্ট চাওয়া হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিযোগিতার পাঠাতে তড়িঘড়ি ছেলের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন মা। মায়ের দাবি, সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ আবেদনের কোনও গুরুত্ব দেননি। পাসপোর্টের কলকাতার আঞ্চলিক অফিস জানায়, বাবার অনুপস্থিতিতে কোনও ভাবেই মায়ের আবেদন মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাদের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান মা।
স্বামীবিচ্ছিন্না মায়ের বক্তব্য, ‘সিঙ্গল মাদার’ কি সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারেন না? বাবার অবর্তমানে সন্তান কি নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? তাঁর দাবি, এর আগে গত বছরও তিনি সন্তানের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। সেই সময় কানাডায় চাকরি করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সঙ্গে যেত ছেলেও। তখনও ছেলেকে পাসপোর্ট না দেওয়ায় সেই চাকরিতে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। সন্তানের বাবা কোথায় তিনি জানেন না বলে দাবি করেন মা। তাঁর বক্তব্য, কয়েক বছর আগে সন্তানের অধিকার চেয়ে স্বামী মামলা করেছিলেন। স্বামীর সঙ্গে সন্তানকে দেখা করার নির্দেশ দেয় আদালত। অথচ স্বামীই আবার ছেলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি। তিনি জানান, স্বামী কোথায় তা তাঁর জানা নেই। সন্তানের বাবার কোনও খোঁজখবর রাখেন না।
মামলাকারীর আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর কোনও যোগাযোগ নেই। স্বামী কোথায় স্ত্রী জানেন না। এই অবস্থায় সন্তান কেন বঞ্চনার শিকার হবে? বিদেশে তার খেলতে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। শুনানির দিন আদালতের কাছে আর্জি জানাব ওই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেন পাসপোর্ট দেওয়া হয়।’’