ছবি: সংগৃহীত।
মুকুল রায় ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন একে অন্যকে ব্যবহার করতে মরিয়া। বিজেপি এ বার চাইছে মুকুল প্রমাণ করুন তিনি অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো প্রয়োজনীয় এক জন নেতা। যাঁর সাহায্যে অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো সম্ভব হবে। অন্য দিকে, মুকুল চাইছেন বিজেপি শুধু রাজ্যে নয়, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁকে স্বীকৃতি দিক।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে মুকুলই সে ক্ষেত্রে দিল্লির স্বীকৃতি নিয়ে রাজ্যের প্রধান নেতা হয়ে উঠবেন। সে কারণে মুকুল রাজ্যসভার সদস্যপদ পেতে আগ্রহী। এবং সংগঠনে রাহুল সিংহের মতো জাতীয় সচিব পদও পেতে চান। মুকুলের যুক্তি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের এই স্বীকৃতি ছাড়া রাজ্যে এত বড় একটা দায়িত্ব পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য দিকে বিজেপি চাইছে, মুকুল দ্রুত প্রমাণ দিন যে তিনি তৃণমূল ভেঙে দিতে পারবেন। এখনও পর্যন্ত কোনও সাংসদ-বিধায়ক মুকুলের সঙ্গে আসেননি। দ্বিতীয়ত, বিজেপি চাইছে, মমতাকেই আক্রমণের মূল নিশানা করুন মুকুল। কংগ্রেস থেকে সম্প্রতি যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁরা যে ভাবে রাহুল গাঁধীকে আক্রমণ করছেন, ঠিক সে রকম।
মুকুলের বক্তব্য, তিনি ধাপে ধাপে মমতা-বিরোধিতাকে তীব্র করে তুলবেন। আস্তিনের নীচে লুকনো সব তাস তিনি এখনই বের করে দিতে চান না। তাঁর কাছে অনেক তথ্য আছে, সময় মতো যেগুলি তিনি প্রকাশ করবেন।
বিজেপির আরও প্রত্যাশা পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুকুল জেলাওয়াড়ি ভাঙন ধরাতে পারবেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ৮০ হাজার বুথ নিয়ন্ত্রণ করে তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে বিরাট ভাবে হারাতে পারবেন। মুকুল দিল্লির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কোনও কর্মসূচি ভিত্তিক আলোচনা করেননি।
মুকুল চাইলেও বিজেপি তাঁকে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করতে দেয়নি। ত্রিপুরার নির্বাচনী কাজকর্ম দেখার বিষয়টি থেকেও তাঁকে ‘আপাতত’ বিরত রাখা হয়েছে। আরএসএস নেতৃত্ব এখনও মনে করছেন, মুকুল জননেতা নন। জনপ্রিয়তাও নেই। উল্টে নারদ-সারদা কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জুড়েছে। সেই জন্য মুকুলকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব না দিয়ে অভ্যন্তরীণ কৌশলগত কাজে লাগানো উচিত। দিলীপ ঘোষ এবং কলকাতার আরএসএস নেতা সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের জুটি চাইছে মুকুল আগে তাঁর কৌশলের সাফল্যের প্রমাণ দিন।
অমিত শাহ রাজ্যসভার সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ট্রাস্টের অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে মুকুলের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন। যাতে তাঁরা কলকাতা সফর সেরে দিল্লি এসে অমিতের কাছে মুকুল সম্পর্কে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে পারেন।
একেই বোধ হয় বলে সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি।