নন্দীগ্রামের পথে আজ, শনিবার ‘একলাই’ হাঁটবেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশি অভিযানে নিহতদের স্মরণে প্রতি বছরই ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ পালন করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজই নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণ সভায় উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ (ববি) হাকিম। প্রতিবারের মতো এ বারও থাকবেন জেলার সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই নিজস্ব কর্মসূচি সারবেন মুকুল। দিল্লিতে শুক্রবার মুকুল জানান, আট বছরে সেখানকার পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হল তা খতিয়ে দেখে, দিল্লি ফিরে কেন্দ্রকে জানাবেন তিনি।
মুকুলের দাবি, “২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামে গুলিচালনার পরে সেখানে প্রথমে আমিই হাজির হয়েছিলাম। রাস্তা কাটা ছিল বলে মোটরবাইকে চেপে গিয়েছিলাম। সেই গুলিচালনার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনেই বাম সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। সেখানকার মানুষ এতদিন পর কেমন আছেন, তা দেখার দায়িত্ব সকলের রয়েছে। বহু কাজ এখনও বাকি আছে। আমি গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখে এসে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাব।” প্রশ্ন হল, কেন্দ্রীয় সরকার কি তাঁর কাছে এই বিষয়ে কোনও রিপোর্ট চেয়েছেন? নাকি দলনেত্রীর উপর চাপ তৈরি করার কৌশল হিসাবেই বিষয়টিকে দেখছেন মুকুল। তাঁর বক্তব্য, “গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সময় যখন তিনি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন, তখন নন্দীগ্রামের কথা উঠেছে। তিনি জানতে চাওয়ায়, সেখানকার ঘটনা তাঁকে বলেছি।”
দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় মুকুলের নন্দীগ্রামে যাওয়া নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি রয়েছে। তবে এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেন, “মুকুল তো দল ছাড়েনি! ও যেতেই পারে। এতে অস্বস্তির কী রয়েছে!” তবে নন্দীগ্রাম-আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দিনে তিনিই নন্দীগ্রামে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন পার্থবাবু। সশরীর তাঁর নন্দীগ্রামে উপস্থিতির জানান দিতে পার্থবাবুর বক্তব্য, “ইতিহাস বিকৃত করা যায় না।” একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ও তিনিই ঘটনাস্থলে প্রথমে গিয়েছিলেন। এমনকী, সিঙ্গুরে মমতার আহত হওয়ার দিনেও মুকুল দিল্লিতে ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে এক দিকে যেমন বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছেন মুকুল, তেমনই একের পর এক বিবৃতি দিয়ে দলকে চাপে ফেলার কৌশলও নিতে পিছপা হচ্ছেন না। এ দিনও নন্দীগ্রামের ঘটনা নিয়ে এনডিএ জোটকে কৃতিত্ব দেন তিনি। মুকুলের কথায়, “নন্দীগ্রাম যখন অবরুদ্ধ তখন আডবাণীর নেতৃত্বে এনডিএ-র দল সেখানে গিয়েছিল। অবরোধ মুক্ত করতে তাঁরা সাহায্য করেছিলেন।” তবে নন্দীগ্রাম-যাত্রা নিয়ে মুকুল যে ভাবে তাঁদের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন, তা নিয়ে পার্থবাবুর কটাক্ষ, “কেউ ওকে ভুল বোঝাচ্ছে। না হলে এত আমিত্বে ভোগে না মুকুল!”
রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর নন্দীগ্রাম দিবসের স্মরণসভায় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতি দেখা যায়নি। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সেখ সুফিয়ান জানান, স্মরণসভায় আসার জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আসতে পারছেন না। তবে মুকুলবাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শুভেন্দুও এ দিন বলেন, “নন্দীগ্রামে স্মরণসভায় আসার বিষয়ে মুকুলবাবু আমাকে কিছু জানাননি।” কিন্তু মুকুল যদি আসেন তা হলে কি তাঁকে সভামঞ্চে স্থান দেওয়া হবে? সুফিয়ান বলেন, “মুকুলবাবু এখনও আমাদের সাংসদ। তাই উনি নন্দীগ্রামে এসে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই।” ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি জানিয়েছে, আজ সকালে প্রথম গোকুলনগরের অধিকারী পাড়ায় শহিদবেদিতে মাল্যদানের পর সোনাচূড়ায় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে হবে স্মরণসভা। রাজ্য জুড়ে এ দিনটি পালন করবে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও।