জনতা পরিবারের দায়িত্ব পেয়ে মুলায়ম সিংহ যাদব ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কৃষক স্বার্থকে সামনে রেখে বিজেপি—বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিয়ে একটি সমাবেশ করতে চান তাঁরা। এতে যোগ দিতে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুলায়ম।
জাতীয় মঞ্চে মোদী সরকারের বিরোধিতার সুযোগ, তা-ও আবার কৃষক স্বার্থকে জড়িয়ে! তবু সে ভাবে আগ্রহ দেখাননি তৃণমূল নেত্রী। যা নিয়ে শাসক-বিরোধী সব স্তরেই ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ কেন এমন পদক্ষেপ, তা নিয়ে তৃণমূলের ঘরের মধ্যেও রয়েছে জল্পনা। তৃণমূল সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে অনেকগুলি সমীকরণ মাথায় রেখে সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছেন মমতা। জনতা পরিবারের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার আগে দেখে নিতে চাইছেন, মুলায়ম-নীতীশ-লালুরা সিপিএম এবং কংগ্রেসের দিকে কতটা ঝোঁকেন। সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইযেচুরির সক্রিয় দৌত্যে জনতা পরিবারের সঙ্গে যদি হাত মেলায় বামেরা, তা হলে সেই মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ানো তৃণমূলের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। সীতারাম সিপিএমের দায়িত্বে আসার পরে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সখ্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলির একটি বড় অংশই মমতার কাছে অচ্ছুৎ হয়ে যেতে পারে। তা হলে বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতটা সুর নরম করবেন তৃণমূল নেত্রী? ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের তুমুল বিরোধিতার পথ থেকে যে সরে আসছেন মমতার সাংসদরা, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ থেকে কয়লা ও খনি বিল পাশের ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় সরকারকে কার্যত সহযোগিতাই করেছে মমতার দল। আর আজ পণ্য পরিষেবা তথা জিএসটি বিলে সরকারকে নীতিগত সমর্থনের আশ্বাস দেওয়ার পর নিছকই ‘লোক দেখানো’ বিরোধিতার পথে গেল তৃণমূল।
প্রশ্ন উঠেছে, সিবিআই তদন্ত তথা সারদা কেলেঙ্কারির চাপেই কি কোণঠাসা তৃণমূল নেতৃত্ব মোদী সরকারের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে সমঝোতার রাস্তায় হাঁটছেন? এই প্রশ্নও উঠে আসছে যে যদি জনতা পরিবারের ছাতার তলায় দাঁড়ানো সম্ভব না-ও হয় মমতার পক্ষে, তা হলেও কি বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম চূড়ান্ত সমঝোতা করা সম্ভব? তৃণমূল সূত্রের খবর, পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন নেত্রী। তবে এই মুহূর্তে দলের কৌশল হল— তেড়েফুঁড়ে মোদী বিরোধিতার স্বর লঘু করে দিয়েও প্রকাশ্যে বিজেপি-বিরোধিতার লাইন বজায় রেখে এগোনো।
যেমন দু’দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে জানিয়েছিলেন, তৃণমূল জিএসটি বিলটি সমর্থন করবে। তবে আজ যখন সরকার বিলটি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছে, প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। বিরোধিতা অবশ্য মূল বিলটি নিয়ে নয়, যে ভাবে এটি আনা হয়েছে, সেই পদ্ধতিগত দিকটি নিয়ে! তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের ব্যাখ্যা, বিলটি নিয়ে আসার কথা সরকার লোকসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আগে থেকে জানায়নি। এটা অনুচিত। তাঁর মতে, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী নতুন কোনও বিল আনা হলে তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এটিকেও কেন পাঠানো হবে না?’’ সৌগতবাবুর মতে, বাজেট অনুদান নিয়ে আজই আলোচনা শুরু হয়েছে। সেটা চলাকালীন সরকার হঠাৎ একটি বিল নিয়ে আসায় সাংসদেরা তাঁদের দাবিদাওয়া জানাতে পারছেন না।