নিহতের বাড়িতে সুজন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র
এক সময়ে ভ্যান চালিয়ে পেট চলত। এখন পেল্লায় বাড়ি, কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বিশ্বনাথ পাত্র। অভিযোগ, সবটাই নাকি তোলাবাজির টাকায়!
কে এই বিশ্বনাথ? বুধবার সকালে কাকদ্বীপের বাপুজি এলাকায় পিটিয়ে খুন করা হয় সিপিএম কর্মী নরোত্তম মণ্ডলকে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বিশ্বনাথ কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তাঁর দাপটের শুরু ২০০৮ থেকে। তখন ভ্যান চালান বিশ্বনাথ। অভিযোগ, ছোটখাটো অপরাধে হাত পাকানোর শুরু তখন থেকেই। নামও উঠতে শুরু করে। যদিও দলের অন্দরে উত্থান থেমে থাকেনি বিশ্বনাথের। ২০১৩-তে কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, বিশ্বনাথের দাপটের নানা কাহিনী।
অভিযোগ, বিরোধী দল করার ‘অপরাধে’ লোকের থেকে জরিমানা আদায়ে ‘নাম’ কুড়িয়েছেন বিশ্বনাথ। নরোত্তমবাবুর স্ত্রী প্রমীলাদেবী বলেন, ‘‘চণ্ডীপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে বসেই তোলাবাজি চালাত ওরা। নানা ছুতোনাতায় সেখানে তুলে নিয়ে যেত। মারধর করত। লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা করত বিশ্বনাথ আর তার দলবল।’’ প্রমীলাদেবীর অভিযোগ, সিপিএম করায় তাঁর স্বামীর কাছ থেকেও ২ লক্ষ টাকা চেয়েছিল বিশ্বনাথরা। তৃণমূলের আর এক প্রভাবশালী নেতা সুভাষ গুড়িয়ার হাত ছিল বিশ্বনাথের মাথায়, এমনটাই অভিযোগ প্রমীলাদেবীর। খুনের ঘটনায় পুলিশের কাছে বিশ্বনাথ, সুভাষ-সহ ২০ জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি।
পুলিশ গ্রেফতার করেছে নিমাই হালদার ও রেজাউল লস্কর নামে দুই অভিযুক্তকে। তাদের বিচারক ৭ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। বাকিদের খোঁজ চলছে। বৃহস্পতিবার নরোত্তমবাবুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতারাও। সুজনবাবু বলেন, ‘‘তোলাবাজদের হাতে চলে গিয়েছে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ। বিশ্বনাথ-সুভাষের ব্যাপারে পুলিশকে আগেই বলা হয়েছিল। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’
এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা অবশ্য বিশ্বনাথ-সুভাষদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এমন কিছু নেতার নাম জড়ানো হয়েছে, যাঁরা ওই ঘটনায় আদৌ জড়িত নন।’’ তোলাবাজির কোনও প্রমাণ নেই বলেও তাঁর দাবি।